চলতি মাসের ১৭ জুলাই মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে ওই সংবাদমাধ্যম ও দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের মানহানি মামলা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কী আছে এই প্রতিবেদনে? কেন ট্রাম্প প্রশাসনের এ প্রতিবেদন নিয়ে এত চিন্তা? মামলা নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? কী হতে পারে মামলার ভবিষ্যৎ?
তুফায়েল আহমদ
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দুই সাংবাদিক ও মালিক রুপার্ট মারডকের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৫৪ হাজার কোটি টাকা) মানহানির মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে নারী নিপীড়ক জেফরি এপস্টেইনের জন্মদিনে অশ্লীল চিঠি ও নগ্ন নারীর ছবি পাঠানো বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। নিউজ করপোরেশন, ডাও জোনস, মারডক ও দুই প্রতিবেদক ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
মামলা করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো অপ্রয়োজনীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত মিথ্যা, ঘৃণ্য ও মানহানিকর ভুয়া সংবাদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। রুপার্ট ও তার ‘বন্ধুরা’ দীর্ঘ জেরা ও সাক্ষ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিক।
গত ১৭ জুলাই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কুখ্যাত নারী নিপীড়ক ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনকে একটি আপত্তিকর চিঠি পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই চিঠিতে একজন নগ্ন নারীর ছবি আঁকা ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে জেফরি এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে পাওয়া অনেক শুভেচ্ছাবার্তার মধ্যে একটি ছিল খোদ ট্রাম্পের। চিঠিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরও ছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, চিঠিটি তারা খতিয়ে দেখেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প দাবি করেন, চিঠিটি ভুয়া ও মানহানিকর।
ট্রাম্প সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, এই গল্প সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের জন্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের লজ্জা হওয়া উচিত।
১৯৫৩ সালে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জেফরি এপস্টেইনের জন্ম। ১৯৯০-এর দশকে হেজ ফান্ড পরিচালক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বিতর্কিত জীবনধারার কারণে জেফরি দ্রুতই আলোচনায় চলে আসেন। ২০০৫ সালে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে জুলাইয়ে মানব পাচার ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন জেফরি।
৯০-এর দশক ও ২০০০-এর দশকের শুরুতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এপস্টেইনের সঙ্গে একাধিক ছবিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা গেছে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, এসব মামলার বিষয় প্রকাশ্যে আসার অনেক আগেই তিনি জেফরির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
গ্রেপ্তারের মাত্র কয়েক দিন পরেই ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট কারাগারে সন্দেহজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন জেফরি। চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, এপস্টেইনকে জেলে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
তবে অনেকই বিশ্বাস করেন, ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক ধামাচাপা দিতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেননি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠির ভাষা ছিল অশ্লীল ও কদর্যপূর্ণ। এই চিঠি ট্রাম্প ও এপস্টেইনের প্রকাশ্য সম্পর্কের চেয়েও ঘনিষ্ঠ কোনো গোপন বোঝাপড়ার ইঙ্গিত দেয়। এপস্টেইন একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী হওয়ায় এই প্রতিবেদন ট্রাম্পের ভাবমূর্তির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
ট্রাম্প বারবার বলে এসেছেন, এমন চিঠির অস্তিত্ব নেই এবং এপস্টেইনের বিরুদ্ধে এসব মামলা হওয়ার অনেক আগে থেকেই তার সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যদি এই চিঠির সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে ট্রাম্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
বিরোধী পক্ষ এই ইস্যুতে ট্রাম্পকে আরও আক্রমণের সুযোগ পাবে। প্রায়শই অদ্ভুত মন্তব্য করে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। কিন্তু এই প্রতিবেদন খোদ ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেই তৈরি করেছে গভীর অস্বস্তি।
এই প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও মার্কিন বিচার বিভাগের (ডিওজে) স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে চাপ তৈরি করেছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা এখন জোর দাবি জানাচ্ছেন—এপস্টেইনের মামলার সঙ্গে জড়িত সব গ্র্যান্ড জুরি দলিল ও ব্যাকগ্রাউন্ড ফাইল প্রকাশ করার জন্য।
এর আগে বিচার বিভাগ দাবি করেছিল, এপস্টেইনের কোনো ক্লায়েন্ট তালিকা ছিল না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এপস্টেইনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ও সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ম্যাক্সওয়েলের ডায়েরি থেকে তারা একাধিক পৃষ্ঠা পেয়েছে, যা ক্লায়েন্ট তালিকার দিকেই ইঙ্গিত করে।
এই প্রতিবেদন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি করেছে এবং মাগা (মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) সমর্থকদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি করেছে। তারা আরও তথ্য প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।
দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করলেন ট্রাম্প। তবে এবার ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্প সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশে বাধার আশঙ্কায় অনেক মামলা করেছেন। বেশিরভাগ মামলায় পরাজিত হলেও গত বছরে এবিসি নিউজ ও প্যারামাউন্টের বিরুদ্ধে মামলা থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি জরিমানা জিতেছিলেন ট্রাম্প।
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) ফ্লোরিডার সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ফেডারেল আদালতে দাখিল করা এ মামলায় ট্রাম্প ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে আরেক পোস্টে বলেছেন, এই মামলা কেবল আমার জন্য নয়, বরং সকল আমেরিকানদের জন্য যারা মিডিয়ার ফেক নিউজের অত্যাচার আর সহ্য করবে না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাবিকৃত অঙ্ক পূর্ববর্তী যেকোনো মানহানি মামলার ক্ষতিপূরণের তুলনায় অনেক বেশি।
১০ বিলিয়ন ডলার দাবি হাস্যকর। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হলেও এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ বাস্তব ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।প্রফেসর রয় গাটারম্যান, পরিচালক টালি সেন্টার, সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টালি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক রয় গাটারম্যান বলেন, ১০ বিলিয়ন ডলার দাবি হাস্যকর। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হলেও এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ বাস্তব ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা আপাতত সম্ভব মনে হচ্ছে না। ওয়াল স্ট্রিট অবশ্যই নিজেদের আইনজীবী ও দায়িত্বশীলদের কথা বলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রেসের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, এমন মামলা ভবিষ্যতে সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যখন রাজনৈতিক পরিবেশ এমনিতেই উত্তপ্ত।
রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক কার্ল টোবিয়াস মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই মামলা প্রথম সংশোধনীর মৌলিক অধিকারকে আক্রমণ করে। সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্প, তাঁর প্রশাসন ও অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের রাজনীতিবিদদের নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে পড়বে এবং অনেক কথা সেন্সর করে ফেলবে।
সিএনএনের চিফ লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট পলা রিড বলেন, এই মামলা হয়তো আসলে ভয় দেখানোর কৌশল। আবার অর্থ কামানোর চেষ্টাও হতে পারে।
এ মামলায় ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অথবা সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। এ ধরনের মামলায় প্রমাণের মানদণ্ড তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় উল্টো বিপদে পড়তে পারেন ট্রাম্প।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলায় হার চিঠির অস্তিত্বকে সত্য প্রমাণিত করবে। আর এতে ট্রাম্পের সঙ্গে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আবার আলোচনায় চলে আসবে—যা রিপাবলিকান ভোটারদের কাছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও এমন চিঠি অপরাধের আওতায় পড়ে না, তবে এই মামলাটি তদন্তে নতুন রূপ নিয়ে আসতে পারে। এপস্টেইন কেসে নতুন করে গভীর তদন্তের আদেশও দিতে পারে আদালত।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রয়োজনীয় প্রমাণ দিতে পারলে বা মামলাটি বাতিল হলে ট্রাম্প নিজেই কাউন্টারসুট বা আইনি জরিমানার মুখে পড়তে পারেন বলেও সন্দেহ করছেন বিশ্লেষকরা।
মামলার ফলাফল ট্রাম্পের বিপক্ষে গেলে রক্ষণশীল মিডিয়াও তাঁর প্রতি সমর্থন কমাতে পারে। কিছু পডকাস্টার ও বিশ্লেষক ইতিমধ্যেই পিছু হটতে শুরু করেছেন।
ট্রাম্পের কঠোর সমর্থকরা এতদিন এই চিঠিকে মিডিয়ার ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু যাদের মধ্যে ট্রাম্পের সত্যতা নিয়ে দ্বিধা আছে, তারা ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে পারেন। মামলার ফলাফল যাই হোক, এই প্রতিবেদন ট্রাম্পের ভাবমূর্তি ও রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, পলিটিকো, আল-জাজিরা, ফ্রিডম ফোরাম, দ্য গার্ডিয়ান, পিবিএস নিউজ, রয়টার্স ও সিএনএন
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দুই সাংবাদিক ও মালিক রুপার্ট মারডকের বিরুদ্ধে ১০ বিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ৫৪ হাজার কোটি টাকা) মানহানির মামলা করেন।
মামলায় বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে নারী নিপীড়ক জেফরি এপস্টেইনের জন্মদিনে অশ্লীল চিঠি ও নগ্ন নারীর ছবি পাঠানো বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। নিউজ করপোরেশন, ডাও জোনস, মারডক ও দুই প্রতিবেদক ইচ্ছাকৃতভাবে ট্রাম্পকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন।
মামলা করার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মতো অপ্রয়োজনীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত মিথ্যা, ঘৃণ্য ও মানহানিকর ভুয়া সংবাদ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে মামলা করেছি। রুপার্ট ও তার ‘বন্ধুরা’ দীর্ঘ জেরা ও সাক্ষ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিক।
গত ১৭ জুলাই ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কুখ্যাত নারী নিপীড়ক ধনকুবের জেফরি এপস্টেইনকে একটি আপত্তিকর চিঠি পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প। ওই চিঠিতে একজন নগ্ন নারীর ছবি আঁকা ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৩ সালে জেফরি এপস্টেইনের ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে পাওয়া অনেক শুভেচ্ছাবার্তার মধ্যে একটি ছিল খোদ ট্রাম্পের। চিঠিতে ট্রাম্পের স্বাক্ষরও ছিল। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, চিঠিটি তারা খতিয়ে দেখেছে।
প্রতিবেদন প্রকাশের পরেই ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প দাবি করেন, চিঠিটি ভুয়া ও মানহানিকর।
ট্রাম্প সরকারের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, এই গল্প সম্পূর্ণ বানোয়াট। এমন মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের জন্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের লজ্জা হওয়া উচিত।
১৯৫৩ সালে নিউইয়র্কের ব্রুকলিনের একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জেফরি এপস্টেইনের জন্ম। ১৯৯০-এর দশকে হেজ ফান্ড পরিচালক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে জনপ্রিয়তা পান। ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে সম্পর্ক ও বিতর্কিত জীবনধারার কারণে জেফরি দ্রুতই আলোচনায় চলে আসেন। ২০০৫ সালে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে জেফরি এপস্টেইনের বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে জুলাইয়ে মানব পাচার ও যৌন নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন জেফরি।
৯০-এর দশক ও ২০০০-এর দশকের শুরুতে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এপস্টেইনের সঙ্গে একাধিক ছবিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখা গেছে। এ বিষয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, এসব মামলার বিষয় প্রকাশ্যে আসার অনেক আগেই তিনি জেফরির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।
গ্রেপ্তারের মাত্র কয়েক দিন পরেই ২০১৯ সালের ১০ আগস্ট কারাগারে সন্দেহজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন জেফরি। চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) প্রতিবেদনে বলা হয়, এপস্টেইনকে জেলে হত্যা করা হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
তবে অনেকই বিশ্বাস করেন, ধনী ও ক্ষমতাধরদের সঙ্গে এপস্টেইনের সম্পর্ক ধামাচাপা দিতে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেননি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিঠির ভাষা ছিল অশ্লীল ও কদর্যপূর্ণ। এই চিঠি ট্রাম্প ও এপস্টেইনের প্রকাশ্য সম্পর্কের চেয়েও ঘনিষ্ঠ কোনো গোপন বোঝাপড়ার ইঙ্গিত দেয়। এপস্টেইন একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধী হওয়ায় এই প্রতিবেদন ট্রাম্পের ভাবমূর্তির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে।
ট্রাম্প বারবার বলে এসেছেন, এমন চিঠির অস্তিত্ব নেই এবং এপস্টেইনের বিরুদ্ধে এসব মামলা হওয়ার অনেক আগে থেকেই তার সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু যদি এই চিঠির সত্যতা প্রমাণিত হয়, তাহলে ট্রাম্পের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে।
বিরোধী পক্ষ এই ইস্যুতে ট্রাম্পকে আরও আক্রমণের সুযোগ পাবে। প্রায়শই অদ্ভুত মন্তব্য করে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রাম্প। কিন্তু এই প্রতিবেদন খোদ ট্রাম্পের সমর্থকদের মধ্যেই তৈরি করেছে গভীর অস্বস্তি।
এই প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ও মার্কিন বিচার বিভাগের (ডিওজে) স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে চাপ তৈরি করেছে। ট্রাম্পের সমর্থকরা এখন জোর দাবি জানাচ্ছেন—এপস্টেইনের মামলার সঙ্গে জড়িত সব গ্র্যান্ড জুরি দলিল ও ব্যাকগ্রাউন্ড ফাইল প্রকাশ করার জন্য।
এর আগে বিচার বিভাগ দাবি করেছিল, এপস্টেইনের কোনো ক্লায়েন্ট তালিকা ছিল না। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এপস্টেইনের দীর্ঘদিনের সহযোগী ও সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী ম্যাক্সওয়েলের ডায়েরি থেকে তারা একাধিক পৃষ্ঠা পেয়েছে, যা ক্লায়েন্ট তালিকার দিকেই ইঙ্গিত করে।
এই প্রতিবেদন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে টানাপোড়েন তৈরি করেছে এবং মাগা (মেইক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন) সমর্থকদের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি করেছে। তারা আরও তথ্য প্রকাশের দাবি জানাচ্ছে।
দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এই প্রথম কোনো সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মামলা করলেন ট্রাম্প। তবে এবার ক্ষমতায় আসার আগে ট্রাম্প সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশে বাধার আশঙ্কায় অনেক মামলা করেছেন। বেশিরভাগ মামলায় পরাজিত হলেও গত বছরে এবিসি নিউজ ও প্যারামাউন্টের বিরুদ্ধে মামলা থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি জরিমানা জিতেছিলেন ট্রাম্প।
গত শুক্রবার (১৮ জুলাই) ফ্লোরিডার সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্টের ফেডারেল আদালতে দাখিল করা এ মামলায় ট্রাম্প ১০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন।
ট্রাম্প তাঁর ট্রুথ সোশ্যালে আরেক পোস্টে বলেছেন, এই মামলা কেবল আমার জন্য নয়, বরং সকল আমেরিকানদের জন্য যারা মিডিয়ার ফেক নিউজের অত্যাচার আর সহ্য করবে না।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দাবিকৃত অঙ্ক পূর্ববর্তী যেকোনো মানহানি মামলার ক্ষতিপূরণের তুলনায় অনেক বেশি।
১০ বিলিয়ন ডলার দাবি হাস্যকর। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হলেও এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ বাস্তব ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।প্রফেসর রয় গাটারম্যান, পরিচালক টালি সেন্টার, সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাকিউজ বিশ্ববিদ্যালয়ের টালি সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক রয় গাটারম্যান বলেন, ১০ বিলিয়ন ডলার দাবি হাস্যকর। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন মিথ্যা প্রমাণিত হলেও এই পরিমাণ ক্ষতিপূরণ বাস্তব ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা আপাতত সম্ভব মনে হচ্ছে না। ওয়াল স্ট্রিট অবশ্যই নিজেদের আইনজীবী ও দায়িত্বশীলদের কথা বলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে।
প্রেসের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, এমন মামলা ভবিষ্যতে সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত যখন রাজনৈতিক পরিবেশ এমনিতেই উত্তপ্ত।
রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক কার্ল টোবিয়াস মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই মামলা প্রথম সংশোধনীর মৌলিক অধিকারকে আক্রমণ করে। সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্প, তাঁর প্রশাসন ও অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের রাজনীতিবিদদের নিয়ে প্রতিবেদন করতে গিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক হয়ে পড়বে এবং অনেক কথা সেন্সর করে ফেলবে।
সিএনএনের চিফ লিগ্যাল অ্যাফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট পলা রিড বলেন, এই মামলা হয়তো আসলে ভয় দেখানোর কৌশল। আবার অর্থ কামানোর চেষ্টাও হতে পারে।
এ মামলায় ট্রাম্পকে প্রমাণ করতে হবে যে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা অথবা সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। এ ধরনের মামলায় প্রমাণের মানদণ্ড তুলনামূলক কঠিন হওয়ায় উল্টো বিপদে পড়তে পারেন ট্রাম্প।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলায় হার চিঠির অস্তিত্বকে সত্য প্রমাণিত করবে। আর এতে ট্রাম্পের সঙ্গে এপস্টেইনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আবার আলোচনায় চলে আসবে—যা রিপাবলিকান ভোটারদের কাছে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
যদিও এমন চিঠি অপরাধের আওতায় পড়ে না, তবে এই মামলাটি তদন্তে নতুন রূপ নিয়ে আসতে পারে। এপস্টেইন কেসে নতুন করে গভীর তদন্তের আদেশও দিতে পারে আদালত।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল প্রয়োজনীয় প্রমাণ দিতে পারলে বা মামলাটি বাতিল হলে ট্রাম্প নিজেই কাউন্টারসুট বা আইনি জরিমানার মুখে পড়তে পারেন বলেও সন্দেহ করছেন বিশ্লেষকরা।
মামলার ফলাফল ট্রাম্পের বিপক্ষে গেলে রক্ষণশীল মিডিয়াও তাঁর প্রতি সমর্থন কমাতে পারে। কিছু পডকাস্টার ও বিশ্লেষক ইতিমধ্যেই পিছু হটতে শুরু করেছেন।
ট্রাম্পের কঠোর সমর্থকরা এতদিন এই চিঠিকে মিডিয়ার ষড়যন্ত্র বলে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন। কিন্তু যাদের মধ্যে ট্রাম্পের সত্যতা নিয়ে দ্বিধা আছে, তারা ধীরে ধীরে দূরে সরে যেতে পারেন। মামলার ফলাফল যাই হোক, এই প্রতিবেদন ট্রাম্পের ভাবমূর্তি ও রাজনীতিতে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্যসূত্র: দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, পলিটিকো, আল-জাজিরা, ফ্রিডম ফোরাম, দ্য গার্ডিয়ান, পিবিএস নিউজ, রয়টার্স ও সিএনএন
রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান (ফাইটার জেট) বিধ্বস্ত হয়েছে। আজ (সোমবার) দুপুর ১টা ৩০মিনিটের দিকে উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজ এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ফ্লাইট ল্যাফটেন্যান্ট তৌকিরসহ অনেকের হতাহতের খবর পাওয়া গেছে।
৭ ঘণ্টা আগেএই ফিরে আসাকে মনে করা হচ্ছে জামায়াতের নতুনভাবে গুছিয়ে তোলার চেষ্টা এবং নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের ইঙ্গিত। সমাবেশটি ছিল জামায়াতের ‘পুনর্জন্ম’—যেখানে তারা একদিকে সাত দফার মাধ্যমে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের রূপরেখা দেয়, অন্যদিকে দুর্নীতিবিরোধী রাজনীতির অঙ্গীকার করে নিজেদের ‘আদর্শিক ইসলামি গণদল’ হিসেবে গড়তে চায়।
১ দিন আগেসারাদেশের নেতাকর্মীরা যাতে নির্বিঘ্নে রাজধানীতে আসতে পারেন এ জন্য ময়মনসিংহ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম থেকে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন ভাড়া করেছে দলটি। এই ৪ ট্রেন ভাড়া করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩২ লাখ টাকা। এছাড়াও ১০ হাজারের বেশি যাত্রীবাহী বাস বুকিং করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে।
২ দিন আগেসমাবেশে বিভিন্ন ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ পরস্পর ঐক্য গড়ার গুরুত্ব তুলে ধরবেন। যেসব ইসলামপন্থী দল কখনো জামায়াতের সঙ্গে একছাতার নিচে আসেনি তারাও সমাবেশে আমন্ত্রণ পেয়েছে।
৩ দিন আগে