leadT1ad

লন্ডনে ইউনূস-তারেক বৈঠক

আগামী বছর রোজার আগেই জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাবনা

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৫, ২০: ৩৪
আপডেট : ১৩ জুন ২০২৫, ২৩: ২১
লন্ডনে মুহাম্মদ ইউনুস ও তারেক রহমানের বৈঠক। ছবি: বিএনপির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

লন্ডনে মুহাম্মদ ইউনুস এবং তারেক রহমানের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের রমজানের আগের সপ্তাহে আয়োজন করার অনুরোধ জানান। এই প্রস্তাবকে নীতিগতভাবে ইতিবাচক হিসেবে নেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২ টায় লন্ডনের অভিজাত পার্ক লেন এলাকার ডরচেস্টার হোটেলে বৈঠক শুরু হয়। দেড় ঘন্টার এই বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, তারেক রহমানের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির এবং প্রধান উপদেষ্টার নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত মুহাম্মদ ইউনূস ও তারেক রহমানের মধ্যকার বৈঠকের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সমঝোতা, সম্ভাব্য নির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়।

তবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টা সম্মতি দিলেও একটি শর্ত জুড়ে দেন। স্পষ্টভাবে জানান, নির্বাচন আয়োজনের পূর্বশর্ত হিসেবে রাজনৈতিক সংস্কার এবং বিচার ব্যবস্থায় অগ্রগতি জরুরি। শর্ত পূরণ হলে ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধকে নির্বাচনের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

কলম ও বই উপহার

বৈঠক শেষে মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি কলম এবং দুটি বই উপহার দেন তারেক রহমান। বই দুটি হলো- গ্রেটা থুনবার্গের ‘নো ওয়ান ইজ ঠু স্মল টু মেক আ ডিফারেন্স’ এবং ‘নেচার ম্যাটারস’

তারেক রহমান এবং মুহাম্মদ ইউনুস। ছবি: সংগৃহীত
তারেক রহমান এবং মুহাম্মদ ইউনুস। ছবি: সংগৃহীত

বৈঠক নিয়ে যৌথ বিবৃতি

লন্ডনে বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন মুহাম্মদ ইউনুস ও তারেক রহমান। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উভয় পক্ষই দেশকে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক ও অবাধ নির্বাচনের পথে এগিয়ে নিতে অঙ্গীকার করেছেন।

বৈঠকে তারেক রহমান নিজ দেশের জনগণের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছার কথা জানান এবং তা যেন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন করা হয় সে বিষয়ে আলোচনা করেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, বৈঠকে তারেক রহমান আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে আয়োজনের প্রস্তাব দেন। তার প্রস্তাবে একমত পোষণ করেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তবে শর্তসাপেক্ষে।

বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলন

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টায় দুইপক্ষের প্রতিনিধিরা যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। এতে বিএনপির পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং হুমায়ুন কবির। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।’

বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া

লন্ডনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর ঢাকায় এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একে ‘টার্নিং পয়েন্টে’ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘চতুর্দিকে এক ধরনের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করছিল। নানা জল্পনা-কল্পনার মধ্যে আজকের বৈঠক প্রমাণ করেছে-দেশের বৃহত্তর স্বার্থে প্রয়োজন হলে জাতীয় ঐক্য গড়া সম্ভব।’

তারেক রহমানের ভূমিকার প্রশংসা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বৈঠকের মধ্য দিয়ে তারেক রহমান তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, কূটনৈতিক প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্রনায়কোচিত গুণাবলির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি শুধু সময় প্রস্তাব করেননি, বরং সমঝোতার মাধ্যমে একটি বাস্তবভিত্তিক নির্বাচনী সময়সীমা নিশ্চিত করেছেন।’

মির্জা ফখরুল আশা প্রকাশ করেন, এই ঐক্যমূলক অগ্রগতি দেশের গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে একটি নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।

পূর্ববর্তী প্রেক্ষাপট

বিএনপি নেতারা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একাধিক বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছেন। ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রথম বৈঠকে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ, নির্বাচন কমিশনের স্বচ্ছতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব সম্পর্কে আলোচনা হয়, যেখানে বিএনপি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ওপর জোর দেয়। যদিও এই বৈঠককে ইতিবাচকভাবে স্বাগত জানানো হয়, তবে অনেকেই নির্বাচনের সময়ের বিষয়ে আপত্তি জানান।

এরপর ২০ মার্চের বৈঠকে নির্বাচনের রোডম্যাপ, ভোটার তালিকা সংশোধন এবং রাজনৈতিক দলের নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেখানে নির্বাচনের সময়সীমা দ্রুত আনার প্রস্তাব উঠে।

গত ১০ মে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়, বিশেষ করে রাজনৈতিক উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণে সমঝোতা তৈরি হয়।

Ad 300x250

সম্পর্কিত