জুলাই ১৮
আজমপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ায় জ্বলতে থাকা চোখ ডলতে ডলতে হাতে পানির কেস নিয়ে সহযোদ্ধাদের ডাকছিলেন, ‘কারও পানি লাগবে, পানি, পানি…..?’ সেই সময়ে ধারণ করা একটি ভিডিও তখনই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঠিক এর ১৫ মিনিট পরেই হঠাৎ মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন মুগ্ধ!
স্ট্রিম প্রতিবেদক
১৮ জুলাই ২০২৪। সকাল থেকেই উত্তপ্ত রাজধানীর রাজপথ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশ কার্যত অচল। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ঢাকার আকাশে থেমে থেমে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজ। মিছিল আর স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছে অসংখ্য প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা।
এমন এক পরিস্থিতিতে রাজধানীর উত্তরা আজমপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ায় জ্বলতে থাকা চোখ ডলতে ডলতে হাতে পানির কেস নিয়ে সহযোদ্ধাদের ডাকছিলেন, ‘কারও পানি লাগবে, পানি, পানি…..?’ সেই সময়ে ধারণকরা একটি ভিডিও তখনই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঠিক এর ১৫ মিনিট পরেই হঠাৎ মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন মুগ্ধ!
সরকারি বাহিনীর ছোড়া একটি বুলেট এসে লাগে তাঁর কপালে। হাতে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বোতলগুলো ছিটকে পড়ে রাস্তায়, তাঁর রক্তের মধ্যে। তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা হলেও পৌঁছানোর আগেই থেমে যায় মুগ্ধের হৃদস্পন্দন। তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখা ছিল, ‘জীবন অর্থবহ হোক, দীর্ঘ নয়।’ জীবনকে নিস্তব্ধ করে এভাবেই চির স্মরণীয় হয়ে থাকলেন মীর মুগ্ধ।
একই দিন রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ (১৭)। তাঁর ফেসবুকের বায়োতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’ ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই থেমে যায় ফারহানের সেই জীবন গড়ার স্বপ্ন। একটি বুলেট কেড়ে নেয় তার সব সম্ভাবনাকে। মা ফারহানা দিবার কোল শূন্য করে শহীদের খাতায় নাম লেখান ফারহান ফাইয়াজ।
এভাবেই সেদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলে মৃত্যুর মিছিল। হাসিনার অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে তথাকথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারান ৩১ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২৪ জন, চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে ২ জন, রংপুর, সাভার ও মাদারীপুরে ১ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
তার আগের দিন(১৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ফাঁকা হওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল আন্দোলনের তীব্রতা কমে যাবে। কিন্তু ১৮ জুলাই সকাল থেকেই আন্দোলনের হাল ধরেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দলে দলে নেমে পরেন রাস্তায়। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে তাঁরা আলাদা আলদাভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
সেদিন আন্দোলনের তীব্রতায় ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। সারা দেশে মোতায়েন করা হয় ২২৯ প্লাটুন বিজিবি।
এসব বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকাগুলোতে দীর্ঘসময় ধরে চলছিল ছাত্র-জনতার অবরোধ। যার ফলে রাজধানীর উত্তরা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর-১০, নীলক্ষেত, আজিমপুর, তেজগাঁও, শান্তিনগর, মহাখালী, শনির আখড়া, কাজলা ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে জুলাই-যোদ্ধাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
সরকারি বাহিনী এসব আন্দোলন ও অবরোধ ঠেকাতে গুলি, টিয়ারশেল, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্তু ছাত্র- জনতা পিছু না হটে বারবার সংগঠিত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে উত্তরা-পূর্ব থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যার ফলে পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। একপর্যায়ে মেরুল বাড্ডায় ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পুলিশের কিছু সদস্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেয়। পরে বিকেলে একটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়াও মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুরের দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিরপুর-১০ পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দিলে সরকার মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে উত্তরা-পূর্ব থানায়ও আগুন দিয়ে পুরো এলাকা অচল করে দেওয়া হয়।
তবে আন্দোলনের তীব্রতা কেবল ঢাকাতেই পুঞ্জীভূত থাকেনি। হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিনের দুঃশাসন আর জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সারা দেশের ছাত্র-জনতা। ফলে আন্দোলনের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। চট্টগ্রাম, নরসিংদী, রংপুর, সাভার, মাদারীপুরসহ দেশের ৪৭ জেলায় সরকারি বাহিনী ও ছাত্র-জনতার মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। যশোর, রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, সিলেট, পঞ্চগড়, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও লক্ষ্মীপুরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করা হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার জুলাই-যোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আলোচনার জন্য তাঁকে ও শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘গুলির সঙ্গে সংলাপ হয় না। রক্তের সঙ্গে বেইমানির চেয়ে আমার মৃত্যু শ্রেয়।’ আন্দোলনের অপর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামও সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তিনি পরদিন শুক্রবার সারা দেশে ‘শাটডাউন’ অব্যাহত রাখা এবং জুমার নামাজের পর গায়েবানা জানাজা আয়োজনের ঘোষণা দেন।
সেদিন সন্ধ্যায় সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে সরকারের আবেদনের শুনানির তারিখ ২১ জুলাই (রবিবার) নির্ধারণ করা হয়। সরকারের নির্দেশে রাত ৯টা থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা স্থগিত রাখার ঘোষণা আসে।
তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পরিস্থিতি বুঝেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে বলে যুক্তি দেন। শুধু ইন্টারনেটই নয়, ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার রেল যোগাযোগও বন্ধ রাখা হয়।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী পদত্যাগ করেন। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীরা এদিনের সহিংসতার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দায়ী করে বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী সারা দেশে এই তাণ্ডব চালিয়েছে এবং তাদের উসকানির ফলেই কয়েকজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও একই সুরে অভিযোগ করেন যে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাঁধে চেপে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনটি ছিনতাই করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
১৮ জুলাই ২০২৪। সকাল থেকেই উত্তপ্ত রাজধানীর রাজপথ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশ কার্যত অচল। সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, ট্রেন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, ঢাকার আকাশে থেমে থেমে গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের আওয়াজ। মিছিল আর স্লোগান নিয়ে রাজপথে নেমে এসেছে অসংখ্য প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা।
এমন এক পরিস্থিতিতে রাজধানীর উত্তরা আজমপুরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। টিয়ারগ্যাসের ধোঁয়ায় জ্বলতে থাকা চোখ ডলতে ডলতে হাতে পানির কেস নিয়ে সহযোদ্ধাদের ডাকছিলেন, ‘কারও পানি লাগবে, পানি, পানি…..?’ সেই সময়ে ধারণকরা একটি ভিডিও তখনই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ঠিক এর ১৫ মিনিট পরেই হঠাৎ মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন মুগ্ধ!
সরকারি বাহিনীর ছোড়া একটি বুলেট এসে লাগে তাঁর কপালে। হাতে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বোতলগুলো ছিটকে পড়ে রাস্তায়, তাঁর রক্তের মধ্যে। তাঁকে নিয়ে হাসপাতালের পথে রওনা হলেও পৌঁছানোর আগেই থেমে যায় মুগ্ধের হৃদস্পন্দন। তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখা ছিল, ‘জীবন অর্থবহ হোক, দীর্ঘ নয়।’ জীবনকে নিস্তব্ধ করে এভাবেই চির স্মরণীয় হয়ে থাকলেন মীর মুগ্ধ।
একই দিন রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ফারহান ফাইয়াজ (১৭)। তাঁর ফেসবুকের বায়োতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘একদিন পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। এমন জীবন গড়ো, যাতে মৃত্যুর পর মানুষ তোমাকে মনে রাখে।’ ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই থেমে যায় ফারহানের সেই জীবন গড়ার স্বপ্ন। একটি বুলেট কেড়ে নেয় তার সব সম্ভাবনাকে। মা ফারহানা দিবার কোল শূন্য করে শহীদের খাতায় নাম লেখান ফারহান ফাইয়াজ।
এভাবেই সেদিন রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে চলে মৃত্যুর মিছিল। হাসিনার অবৈধ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে তথাকথিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারান ৩১ জন। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২৪ জন, চট্টগ্রাম ও নরসিংদীতে ২ জন, রংপুর, সাভার ও মাদারীপুরে ১ জন নিহত হন। আহত হন প্রায় দেড় হাজার মানুষ।
তার আগের দিন(১৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ফাঁকা হওয়ায় ধারণা করা হয়েছিল আন্দোলনের তীব্রতা কমে যাবে। কিন্তু ১৮ জুলাই সকাল থেকেই আন্দোলনের হাল ধরেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দলে দলে নেমে পরেন রাস্তায়। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্তে তাঁরা আলাদা আলদাভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।
সেদিন আন্দোলনের তীব্রতায় ঢাকা মহানগর পুলিশ রাজধানীতে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে। সারা দেশে মোতায়েন করা হয় ২২৯ প্লাটুন বিজিবি।
এসব বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও এলাকাগুলোতে দীর্ঘসময় ধরে চলছিল ছাত্র-জনতার অবরোধ। যার ফলে রাজধানীর উত্তরা, মেরুল বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ, ধানমন্ডি, মিরপুর-১০, নীলক্ষেত, আজিমপুর, তেজগাঁও, শান্তিনগর, মহাখালী, শনির আখড়া, কাজলা ও যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে জুলাই-যোদ্ধাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়।
সরকারি বাহিনী এসব আন্দোলন ও অবরোধ ঠেকাতে গুলি, টিয়ারশেল, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এতে হতাহতের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। কিন্তু ছাত্র- জনতা পিছু না হটে বারবার সংগঠিত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে উত্তরা-পূর্ব থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। যার ফলে পুরো এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। একপর্যায়ে মেরুল বাড্ডায় ছাত্র-জনতার ধাওয়া খেয়ে পুলিশের কিছু সদস্য অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেয়। পরে বিকেলে একটি হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তাঁদের উদ্ধার করা হয়।
এ ছাড়াও মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ও সেতু ভবনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। দুপুরের দিকে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা মিরপুর-১০ পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দিলে সরকার মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেয়। পরে উত্তরা-পূর্ব থানায়ও আগুন দিয়ে পুরো এলাকা অচল করে দেওয়া হয়।
তবে আন্দোলনের তীব্রতা কেবল ঢাকাতেই পুঞ্জীভূত থাকেনি। হাসিনা সরকারের দীর্ঘদিনের দুঃশাসন আর জুলাইয়ের হত্যাকাণ্ডের ফলে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সারা দেশের ছাত্র-জনতা। ফলে আন্দোলনের তীব্রতা ছড়িয়ে পড়তে থাকে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। চট্টগ্রাম, নরসিংদী, রংপুর, সাভার, মাদারীপুরসহ দেশের ৪৭ জেলায় সরকারি বাহিনী ও ছাত্র-জনতার মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়।
দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। যশোর, রাজবাড়ী, ঝালকাঠি, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজশাহী, সিলেট, পঞ্চগড়, কক্সবাজার, রাঙামাটি ও লক্ষ্মীপুরে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো অবরোধ করা হয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার জুলাই-যোদ্ধাদের সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাব দেয়। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আলোচনার জন্য তাঁকে ও শিক্ষামন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘গুলির সঙ্গে সংলাপ হয় না। রক্তের সঙ্গে বেইমানির চেয়ে আমার মৃত্যু শ্রেয়।’ আন্দোলনের অপর সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামও সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সংলাপের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন। তিনি পরদিন শুক্রবার সারা দেশে ‘শাটডাউন’ অব্যাহত রাখা এবং জুমার নামাজের পর গায়েবানা জানাজা আয়োজনের ঘোষণা দেন।
সেদিন সন্ধ্যায় সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে সরকারের আবেদনের শুনানির তারিখ ২১ জুলাই (রবিবার) নির্ধারণ করা হয়। সরকারের নির্দেশে রাত ৯টা থেকে সারা দেশে ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। পরিস্থিতি শান্ত না হওয়া পর্যন্ত ইন্টারনেট সেবা স্থগিত রাখার ঘোষণা আসে।
তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, পরিস্থিতি বুঝেই ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছে বলে যুক্তি দেন। শুধু ইন্টারনেটই নয়, ঢাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য জেলার রেল যোগাযোগও বন্ধ রাখা হয়।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জেলার শতাধিক ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী পদত্যাগ করেন। আন্তর্জাতিক মহল থেকেও বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকারের প্রতি সম্মান জানাতে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
তৎকালীন সরকারের মন্ত্রীরা এদিনের সহিংসতার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে দায়ী করে বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেন, বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত ক্যাডার বাহিনী সারা দেশে এই তাণ্ডব চালিয়েছে এবং তাদের উসকানির ফলেই কয়েকজনকে প্রাণ দিতে হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও একই সুরে অভিযোগ করেন যে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাঁধে চেপে বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনটি ছিনতাই করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে বলা হয়, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষা ও জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের সব ধরনের নির্বাচনে ভোটগ্রহণ চলাকালে পর্যবেক্ষক হতে গেলে ন্যূনতম এইচএসসি পাস বা সমমানের শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে। বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।
১ ঘণ্টা আগেগোপালগঞ্জে জাতীয় নগারিক কমিটির (এনসিপি) ‘জুলাই পদযাত্রা’ কেন্দ্র করে সহিংসতার ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। এতে ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৪০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
১ ঘণ্টা আগেরংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালের পর ঢাকা বিভাগে পদযাত্রা শুরু করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)৷ মানিগঞ্জের পর ঢাকা বিভাগের দ্বিতীয় জেলা হিসেবে মুন্সিগঞ্জে পথসভা করেছে দলটি৷
৩ ঘণ্টা আগেগোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে রমজান মুন্সী (৩২) নামের আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগে