leadT1ad

১৪ জুলাই, শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন

আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকার’ বললেন শেখ হাসিনা, বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয়

১৪ জুলাই ২০২৪। কোটা সংস্কার আন্দোলন জনভিত্তি পেল নতুনভাবে। এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন আন্দোলনকারীদের 'রাজাকারের নাতিপুতি' বলে অভিহিত করলেন, মূলত তখনই তীব্র অপমানে ফুঁসে উঠল সবাই। এরপর থেকে প্রতিদিনই উত্তাল হতে থাকে দৃশ্যপট। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের দিনগুলোয় ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে জন্ম নিয়েছে কত না বাস্তব গল্প। সেসব দিনে ফিরে দেখা।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ২১: ৫৫
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ০০: ২৯
স্ট্রিম গ্রাফিক

বেলিংহাম তখন বল নিয়ে এক পাক ঘুরে শট নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। তাঁর সেই পাকে দানি কার্ভাহাল আর দানি ওলমো মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছেন। ম্যাচের তখন খুব বেশি সময় বাকি নেই। অথচ স্পেন ১-০ তে এগিয়ে। বলটিকে একবার জালে না জড়াতে পারলে ইংল্যান্ডের ইউরো স্বপ্ন সেখানেই শেষ।

শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ প্রস্ততি নিচ্ছিলেন খেলা দেখার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ইউরোর খেলা দেখানোর জন্য বড় পর্দার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সেদিনই ফাইনাল, স্পেন বনাম ইংল্যান্ড। কিন্তু শুধু ব্যবস্থা করা পর্যন্তই সার। সে রাতে টিএসসিতে আর খেলা দেখানো হয়নি।

কিন্তু খেলা চলাকালে অন্যান্যদিন যেমন থাকে—তেমনই সরগরম ছিলো টিএসসি। শিক্ষার্থীদের চিৎকারে তখন কান পাতা দায়। তবে এর কোনো কিছুই বেলিংহামের নৈপুণ্য কিংবা ইয়ামালের নিখুঁত বাঁকানো শটের জন্য নয়। সে রাতে শিক্ষার্থীরা তাঁদের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন প্রতিবাদের, স্লোগানে বিক্ষোভ দেখানোর। কিন্তু কী হয়েছিল সেদিন?

বলা হচ্ছে গত বছরের ১৪ জুলাইয়ের কথা। এদিন শেখ হাসিনা গণভবনে তাঁর চীন সফর উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু ‘নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না।’ তাই প্রসঙ্গ চীন সফর হলেও সে সম্মেলনে অবধারিতভাবে উঠে এলো কোটা ইস্যু।

সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিক প্রভাষ আমিন বললেন, ‘এখন আমার সামনে যদি দুইটা অপশন থাকে যে দুইজনই সমান মেধাবী। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, একজন রাজাকারের সন্তান। আমি অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে চাকরি দিতে চাই।’

শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন। গণভবন, ১৪ জুলাই, ২০২৪। পিআইডির ছবি
শেখ হাসিনার সংবাদ সম্মেলন। গণভবন, ১৪ জুলাই, ২০২৪। পিআইডির ছবি

এ কথার সঙ্গে শেখ হাসিনা যোগ করেন, ‘সেখানে অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রাধিকার পাবে। এটা তো দিতেই হবে। কোটা আর মেধা তো এক জিনিস না। এখানে দ্বন্দ্বটা সৃষ্টি করে এটা একটা ট্যাকটিক্স (কৌশল)। তার মানে কি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, নাতিপুতিরা কেউ মেধাবী না? যত রাজাকারের বাচ্চা, নাতিপুতিরা হলো মেধাবী? তাই না? কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না যে যাদেরকে মেধাবী না বলছে তাদের হাতে কিন্তু ওরা পরাজিত। যুদ্ধে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারাই জয়ী হয়েছিল। রাজাকারেরা জয়ী হয় নাই।’

শেখ হাসিনার এই বক্তব্য মূহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল একসাথে এসে মিশেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়ায়। সে রাতে ঘড়ির কাঁটা যখন নয়ের ঘর পেরিয়েছে। সেই হলপাড়ার বিভিন্ন হল থেকে স্লোগান ভেসে আসতে লাগল। শিক্ষার্থীরা সমস্বরে স্লোগান তুললেন, ‘তুমি কে, আমি কে? রাজাকার রাজাকার।’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে? সরকার সরকার।’

চোখের নিমিষে শিক্ষার্থীদের স্লোগানমুখর বিক্ষোভ মিছিল সড়কে নেমে এলো। শুধু ছেলেরা নয়, হলের ‘সান্ধ্যআইন’ ভেঙে নেমে এলেন মেয়েরাও। তাঁরা এলেন রোকেয়া হল থেকে, সুফিয়া কামাল হল থেকে। ধীরে ধীরে অন্যান্য হল থেকেও দলে দলে শিক্ষার্থীরা যোগ দিলেন।

সবার মুখে তখন একটাই কথা। রাজাকার বলে শেখ হাসিনা তাঁদের অপমান করেছেন। তাঁদের প্রশ্ন, কোটা সংস্কার চাওয়া সকলেই কি রাজাকারের বংশধর? তাঁরা তাই স্লোগান দিলেন, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার।’

তখন মধ্যরাত। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ মাইক, কেউ লাঠি, কেউ ঝাড়ু নিয়ে এসেছেন। কেউবা আবার এসেছেন স্টিলের থালা নিয়ে। সেটিই বাজিয়ে বাকিদের উদ্বুদ্ধ করছেন।

রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সময় শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা। গুলিস্তান, ১৪ জুলাই, ২০২৪। তথ্য অধিদপ্তরের ছবি
রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদানের সময় শিক্ষার্থীদের গণপদযাত্রা। গুলিস্তান, ১৪ জুলাই, ২০২৪। তথ্য অধিদপ্তরের ছবি

সতর্ক পাহারায় পুলিশ

ওদিকে শাহবাগ মোড়ে তখন একদল পুলিশ সতর্ক পাহারায়। কাউকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ক্যাম্পাসের বাইরে থাকা শিক্ষার্থীরাও শাহবাগ মোড় পেরিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারছেন না। কেন যেতে দেওয়া হচ্ছে না, জিজ্ঞেস করতেই এক পুলিশসদস্য বললেন, ‘যায়েন না তো ভাই, ভিতরে গ্যাঞ্জাম।’

শাহবাগ মোড়ের একপাশে রিকশার জটলা। চালকেরা নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করছেন। আসার পথে ফার্মগেটে নাকি একদল লোককে অস্ত্র হাতে দেখা গেছে। সেই নিয়ে তাঁদের ভয়। আশঙ্কা করছেন, আজ রাতেই হয়তো রক্তারক্তি হবে।

টিএসসি থেকে ভিসি চত্বর পর্যন্ত যখন আন্দোলনকারীদের দখলে, ঠিক সে সময় মধুর ক্যান্টিনে ছাত্রলীগের একদল কর্মী জড়ো হয়েছেন। দূর থেকে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকবার স্লোগান চালাচালি হলেও সে রাতে কোনো হামলা হয়নি।

কী হয়েছিল দিনে

এ সব ঘটনার আগে ওইদিন দুপুরে কোটা সংস্কারের দাবিতে গণপদযাত্রা শেষে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন আন্দোলনকারীরা। পথিমধ্যে বহু জায়গায় তাঁদের আটকানো হয়, ব্যারিকেড দেওয়া হয়। তবে সেসব উপেক্ষা করেই এগিয়ে যান তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ১২ জনের একটি প্রতিনিধিদল বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়ে আসেন।

স্মারকলিপি প্রদান শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবেই বলতে চাই যে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে জনদুর্ভোগ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না। সরকারের কী উদ্দেশ্য, সেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না।’

ওইদিন রাত একটায় ইউরো ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড গোল দিতে পেরেছিল বটে কিন্তু তারা জিততে পারেনি। স্পেন পরে আরেক গোল দিয়ে ২-১-এ সে ম্যাচ জেতে। ইংল্যান্ড হারলো আর বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন এক গণ-অভ্যুত্থানের এই ছিল শুরু।

Ad 300x250

গাজীপুরে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনায় আহতদের দেখতে বার্ন ইনস্টিটিউটে প্রধান উপদেষ্টা

পরিবারের দাবি মৃতদেহ সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে কর্তৃপক্ষ, সরকার বলছে ভিন্ন কথা

চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা

ইসলামি শক্তির ঐক্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে

সম্পর্কিত