leadT1ad

প্রসাধনীতে শুল্ক বৃদ্ধি

বাজেট ছাড়াচ্ছে ক্রেতাদের, শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫, ১৯: ০২
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ১৯: ২২
বাজেটে শুল্ক বাড়ায় দর বেড়েছে প্রসাধনীর | স্ট্রিম গ্রাফিক্স

লায়লা ইসলাম একজন অনলাইন উদ্যোক্তা। থাকেন চট্টগ্রাম শহরের পতেঙ্গা এলাকায়। সেখান থেকেই তিনি ফেসবুকে একটি পেজে বিদেশি কসমেটিকস বিক্রি করেন। এবারের বাজেটে বিদেশি কসমেটিকস পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাবের খবরে তাঁর বিক্রি কমে গেছে। কেউ কেউ আগের অর্ডার বাতিল করছেন। তিনিও পুরোনো দামে আর পণ্য কিনতে পারছেন না।

লায়লা ইসলাম বলেন, ‘আগে যে আমদানিকারকরা দোহা (কাতার), দুবাই (আরব আমিরাত), ব্যাংকক (থাইল্যান্ড) থেকে পণ্য এনে দিতেন, তাঁদের কাছেও পণ্যের এখন দাম বেশি। কারণ শুল্ক ও কাগজপত্র খরচ বেড়েছে। অনেক পণ্যে এখন শুল্ক ধরা হচ্ছে ইউনিট প্রতি ৮-১০ ডলার, যা আগে ছিল ৩-৪ ডলার। তাই আমি সাময়িকভাবে অর্ডার নেওয়া বন্ধ রেখেছি।’

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ নার্স সুমনা রহমান। কাজের প্রয়োজনেই তাঁকে নিয়মিত প্রসাধনী কিনতে হয়। তিনি বলেন, ‘একটা কাজল আগে ১২০ টাকায় কিনতাম, এখন সেটাই দোকানি চাইছেন ১৮০ টাকা। শুনে প্রথমে অবাক হয়েছি, পরে শুনলাম বাজেটে কর বাড়ছে। এখন মাসিক বাজেট তো গড়বড় হয়ে যাবে!’

সোমবার (২ জুন) দেশের ৫৪তম জাতীয় ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশি প্রসাধনী আমদানি ও বিক্রিতে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামের বাজারে। বিশেষ করে ঠোঁট, চোখ ও মুখমণ্ডলে ব্যবহারের প্রসাধনী লিপস্টিক, আই শ্যাডো, ফাউন্ডেশন, কাজল— এসবের দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা।

‘আগে ৪০০ টাকায় ভালো মানের লিপস্টিক দিতাম, এখন ৫৫০ টাকায়ও লাভ থাকছে না’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চট্টগ্রামের সামিয়া ট্রের্ডাসের মালিক মো. মোস্তাক। তিনি বলেন, ‘বাজেটে বিদেশি প্রসাধনীর ইউনিট প্রতি শুল্ক বাড়িয়েছে সরকার। আগে প্রতি পিস লিপস্টিকে যেখানে গড়ে ২৫-৩০ টাকা শুল্ক পড়ত, এখন ৫০ টাকার ওপর পড়ছে বলে জানতে পেরেছি। ফলে কাস্টমস থেকে পণ্য খালাসের খরচও বাড়বে। নতুন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাড়তি দাম দিয়ে আনতে হবে। তখন দেশের বাজারেও দাম বাড়বে।’

চট্টগ্রাম কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী ফারিয়া বিনতে আজম বলেন, ‘আমরা যারা সীমিত বাজেটে কসমেটিকস কিনি, তারা সাধারণত ২০০–৩০০ টাকার মধ্যেই কিছু একটা কিনতে চাই। এখন একটা আইশ্যাডো প্যালেটের দাম শুনলাম ৫৫০ টাকা, মানে বাজেটের বাইরে চলে যাচ্ছে।’

চট্টগ্রামের বিভিন্ন কসমেটিকস দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পণ্যের নতুন মূল্য টানিয়ে রাখছেন দোকানিরা। অধিকাংশ দোকানে আগের দামে পণ্য বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নগরের জিইসি মোড়, আগ্রাবাদ, সীতাকুণ্ড ও খাতুনগঞ্জ এলাকার আমদানিকারকেরা নিশ্চিত করেছেন, প্রস্তাবিত বাজেট কার্যকর হলে নতুন চালানগুলোতে দাম বাড়বেই।

ব্যবসায়ী ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্টদের মতে, শুল্ক মূল্য হঠাৎ দ্বিগুণের কাছাকাছি হলে চোরাচালান, অবৈধ অনলাইন সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। ফলে সরকার যদি স্থানীয় উৎপাদন না বাড়াতে পারে বা যৌক্তিক শুল্ক কাঠামো নিশ্চিত না করে, তাহলে বাজারে বিশৃঙ্খলা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্ট সমিতির সদস্য মো. ফিরোজ হোসেন। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যেসব পণ্যে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে আমদানিকারকরা আগে যেমন ৩০০ ডলার ধরে শুল্ক দিতেন, এখন একই পণ্যে ৬০০-৭০০ ডলার ধরে শুল্ক দিতে হবে। এটা সরাসরি বাজারে প্রভাব ফেলবে, কারণ ব্যবসায়ীরা তার লোকসান মেটাতে দাম বাড়াবেনই।’

বিষয়:

Ad 300x250

সম্পর্কিত