leadT1ad

আল জাজিরার প্রতিবেদন

‘আচ্ছা দেখি…আমি দেখতাছি’, আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম নিয়ে সালমান এফ রহমান

স্ট্রিম প্রতিবেদক
স্ট্রিম প্রতিবেদক
ঢাকা
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৫, ২১: ১৭
সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সালমান এফ রহমান। ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর তাঁর ময়নাতদন্ত ঘিরে আওয়ামী লীগনেতা সালমান এফ রহমান ও তৎকালীন পুলিশ প্রধানের একটি ফোনালাপের রেকর্ড সামনে এনেছে আল-জাজিরা।

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেল চারটায় ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিটের প্রতিবেদনটি প্রচারিত হয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ইংরেজির ইউটিউব চ্যানেলে। এর আগে গত ৯ জুলাই ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি শেখ হাসিনার একটি ফোন রেকর্ড নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর আজ আল জাজিরা একই ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করল।

আল-জাজিরার হাতে আসা গোপন রেকর্ডিং থেকে জানা যায় যে, শেখ হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র সালমান এফ রহমান পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ফোন করে বলছেন, ‘আচ্ছা মামুন, ওই যে রংপুরে যে আবু সাঈদ যে মারা গেল, ওর পোস্টমর্টেম হইছে? রিপোর্ট পাইছেন আপনারা?’ উত্তরে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘এখনো পাইনি স্যার।’

ওইসময় সালমান এফ রহমান বলেন, ‘এখনো পান নাই কেন, এত সময় লাগে কেন?’

উত্তরে পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আমাদের দেয় নাই স্যার, আমাদের সাথে তো ওরা লুকোচুরি খেলে।’

সালমান জানতে চান, ‘পোস্টমর্টেম করা হইছে তো?’ উত্তরে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন জানান, করা হয়েছে। সালমান আবার জানতে চান, ‘তো রংপুর মেডিকেল কলেজে আমাদেরকে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে সময় লাগবে কেন? যদি করে থাকে। লুকোচুরি কে খেলতেছে? রংপুর মেডিকেল?’

সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেই আবু সাঈদের রিপোর্টকে টেম্পারিং করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে আসলে অফার করা হয়েছিল যে, তোমার দুই সপ্তাহ ছুটি দিয়ে দিচ্ছি, তুমি আমাদের মনঃপুত রিপোর্টটা দাও, থাইল্যান্ডে ট্যুর করো। ফ্যামিলি নিয়ে কক্সবাজারে সাতদিন থেকে আসো। রাজিবুল ইসলাম, চিকিৎসক, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসাপাতাল

পুলিশ প্রধান বলেন, ‘আমরা বললাম কী হইছে? এইটাও আমাদের সাথে বলতে ইয়ে করে। অনেক সময়ে আছে না যে, তার যে একটা, এই… একটা কিছু হইলে এরপরে আমাদেরকে…আমরা তো কিছু হইলে বলি যে, এই… এই ডাইমেনশনে যাচ্ছে…আমরা এগুলার প্রস্তুতি নিচ্ছি, এই রকম কিছু আছে। ওরা আমাদের সাথে কোনো কথাই বলে না!’

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আচ্ছা দেখি… আমি দেখতাছি।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, সেদিন তাঁকে প্রচুর চাপের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই, তিনটার পর থেকে পুলিশ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমার কাছে অনেক দিক দিয়ে ফোন আসছিল, যে অটোপসি হচ্ছে কিনা, হবে কিনা।’ তিনি বলেন, ‘পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সাড়ে চারটা-পাঁচটার পর থেকে আমার সাথে কথা বলতে শুরু করে। তারা এটা খুব গুরুত্বের সাথে ইয়ে করে, যেহেতু লাইভ প্রোগ্রামে গুলি হয়েছে।’

চিকিৎসক রাজিবুল জানান, তাঁকে বলা হয় সাঈদের মাথায় আঘাত করাকে ফোকাস করে দ্রুত পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে। রিপোর্টটি তাঁকে পাঁচবার লিখতে হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানান তিনি। বলেন, ‘প্রতিবার রিপোর্ট লিখি, জমা দিতে যাই, পুলিশের মনঃপুত হয় না।’

আল-জাজিরা জানায়, শেখ হাসিনার গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরাও মেডিকেল রিপোর্টটি সংগ্রহের চেষ্টা করছিলেন। নাম ও আসল কণ্ঠ গোপন রেখে জ্যেষ্ঠ গোয়েন্দা কর্মকর্তার বক্তব্য তুলে ধরে আল-জাজিরা। সেখানে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বললেন যে, আবু সাঈদ গুলিতে মারা যাননি। আমি ডাক্তারদের কাছ থেকে রিপোর্টটা পাচ্ছিলাম না। আমি চেষ্টা করেছি, রিপোর্টটা নিতে। কিন্তু ডাক্তাররা রিপোর্টটা লিখতে অনাগ্রহী ছিলেন।’

চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকেই আবু সাঈদের রিপোর্টকে টেম্পারিং করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে আসলে অফার করা হয়েছিল যে, তোমার দুই সপ্তাহ ছুটি দিয়ে দিচ্ছি, তুমি আমাদের মনঃপুত রিপোর্টটা দাও, থাইল্যান্ডে ট্যুর করো। ফ্যামিলি নিয়ে কক্সবাজারে সাতদিন থেকে আসো। আমি সবগুলোই রিফিউজ করেছি।

Ad 300x250

সম্পর্কিত