leadT1ad

উত্তরায়–বিমান–বিধ্বস্ত /‘বন্ধুর সাথে মরতে পারতাম আমিও’

স্ট্রিম প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৪৮
উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত। ছবি: সংগৃহীত

স্কুল ছুটির কিছু পরে নিজের সবচেয়ে কাছের বন্ধু আব্দুল্লাহ শামীমের জন্য ১৩ বছর বয়সী নাওয়াফ উল্লাহ তার বাবা মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে অপেক্ষা করছিল। হঠাৎ সে দেখতে পায়, একটি ছোট বিমান তাদের শ্রেণিকক্ষ ‘প্লাটিনাম’-এর নিচে আছড়ে পড়েছে। মূহুর্তে চারপাশ ঢেকে যায় আগুনের লেলিহান শিখায়।

গত সোমবারের (২১ জুলাই) বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিল নাওয়াফ। সে বলে, ‘চমকে যাই আমি। বুঝতেই পারছিলাম না কি হচ্ছে। শুধু বুঝতে পারছিলাম খারাপ কিছু হয়েছে। বেশ কিছুক্ষণ পরে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড শামীম বের হয়ে আসে। জামাকাপড় সব পুড়ে গেছে। এলোমেলো দৌড়াচ্ছে সে। কিন্তু কেউ ধরছে না। রাতে খবর পাই সে আর নেই। পরে ভাবলাম, গতকালকে ডিটেনশন ফাঁকি না দিলে বন্ধুর সাথে মরতে পারতাম আমিও।’

গতকাল মঙ্গলবার বড় ভাইয়ের সঙ্গে উত্তরায় মাইলস্টোন কলেজে আন্দোলনে একাত্ম হতে এসেছিল নওয়াফ। সেখানেই এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র নাওয়াফের।

সেদিনের দুর্ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে নাওয়াফ জানায়, গতকাল তারও ডিটেনশনে পড়ার কথা ছিল। কিন্তু শ্রেণিকক্ষে এক বন্ধু যে ডিটেনশনের লিস্ট করেছিল, তাকে ম্যানেজ করে সে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে বেরিয়ে আসে। সে তার বন্ধু শামীমকেও একইভাবে বের হয়ে আসতে বলেছিল। কিন্তু সে বের হয়নি।

নাওয়াফ বলে, ‘আমি ইংলিশ ভার্শনের (তিনতলা ভবনের) ওপর দিয়ে তাকিয়ে দেখি, একটা একটা কিছু ধেয়ে আসছে। সেটি ঘুরতে ঘুরতে ভবনের সামনে আঘাত করে। তারপর আগুনের কুণ্ডলী আর ধোঁয়া!

ওই দিনের বিমান দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় নওয়াফের বন্ধু শামীম। ঢাকা মেডিকেলের তথ্য মতে, তার শরীরের ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ভর্তি করা হয় বার্ন ইউনিটে। রাত ১১টার দিকে চিকিৎসক শামীমকে মৃত ঘোষণা করেন।

উত্তরার হাসপাতালগুলোর ঘুরে যা জানা গেল

উত্তরা আধুনিক হাসপাতালের শিশু বিভাগের ১০০৩ নং কেবিনে ভর্তি রয়েছেন মাইলস্টোন কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী আফিফা (১৩)। বিমান দুর্ঘটনায় আগুনে তার বা-হাত ঝলসে গেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার অবস্থা উন্নতির পথে, দগ্ধ হলেও তা গুরুতর নয়।

উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজের ডেপুটি ডিরেক্টর ডা. বজলুর রহমান আদিল বলেন, ‘গুরুতর আহতদের আমাদের হাসপাতালের তত্ত্বাবধানেই বার্ন ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে পাঠিয়েছি। প্রথম ধাপের ট্রিটমেন্ট দিতে আমরা সব চিকিৎসক তখন জরুরি বিভাগে অবস্থান করেছি।’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, তারা ২৭ জন আহতকে চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র দিয়েছে। শতাধিক আহতকে চিকিৎসার জন্য আনা হলেও ৬০ জন হাসপাতালের তালিকায় লিপিবদ্ধ হন। এরমধ্যে অন্তত ৩০ জনের অবস্থা ছিল গুরুতর। তাদের বার্ন ইনস্টিটিউটে রেফার করা হয়েছে।

এদিকে উত্তরার বেসরকারি হাসপাতাল লুবানা জেনারেল হাসপাতাল জানিয়েছে, চিকিৎসা নিতে আসা অধিকাংশ রোগীর প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মারাত্মক দগ্ধ অবস্থায় ছিলেন। সব মিলিয়ে ২৮ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এলেও গুরুতর অবস্থা বিবেচনায় ১৫ জন রোগীকে অন্যত্র রেফার করা হয়। ভর্তি করা হয় মাত্র একজন রোগীকে।

নিকটবর্তী আরেক বেসরকারি হাসপাতাল উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপতাল জানিয়েছে, তাদের হাসপাতালে আসা ১২ জন রোগীর মধ্যে ৮ জন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৪ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়।

ক্রিসেন্ট হাসপাতালের কাস্টমার রিলেশন অফিসার (সিআরও) মো. নয়ন জানান, বেশির ভাগ রোগী ছিলেন সামান্য দগ্ধ। তারা ধোঁয়ার প্রভাবে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।

এদিকে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের জরুরি বিভাগের নার্স সীমা রায় বলেন, ‘আহতদের স্যালাইন দেওয়ার জন্য ভেইন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ছোট ছোট বাচ্চাগুলো পোড়া যন্ত্রণায় ছটফট করছিল।’

Ad 300x250

সম্পর্কিত