leadT1ad

ফিরে দেখা ২৭ জুলাই

শিক্ষকেরা ডিবি অফিসে গেলেও দেখা দিলেন না হারুন

২৭ জুলাই ২০২৪। এদিন সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলমকে হেফাজতে নেয় ডিবি। আর আগে থেকেই ডিবি হেফাজতে ছিলেন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদার। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের রুদ্ধশ্বাস দিনগুলোয় ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে জন্ম নিয়েছে কত না সত্য গল্প। সেসব দিনে ফিরে দেখা।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২: ২৭
শিক্ষকেরা ডিবি অফিসে গেলেও দেখা দিলেন না হারুন। ২৭ জুলাই ২০২৪। ছবি: সংগৃহীত

বাইরে থেকে খবর আসে, একদল লোক সমন্বয়কদের খোঁজ নিতে এসেছেন। তারপরই একপ্রস্থ নীরবতা। ভেতর থেকে আর কোনো খবর বাইরে বেরোয় না। ওই মানুষগুলো তখন ডিবি প্রাঙ্গণে ঠায় দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ পর জানানো হয়, শুধু ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ অনুমতি দিলেই ডিবি অফিসে ঢোকার ‘সৌভাগ্য’ হবে তাঁদের। তাঁরা ফের অপেক্ষা করেন। কিন্তু ডিবিপ্রধান আর দেখা দেন না। শেষমেশ জানানো হয়, আজ আর এ বিষয়ে কোনো কথা বলা যাবে না। কারণ, হারুন অর রশীদ অফিস থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তিও আর নেই যে এই বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন।

এটি গত বছরের ২৭ জুলাইয়ের ঘটনা৷ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ১২ সদস্য এদিন রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি অফিসে যান। তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল, ডিবি অফিসে হেফাজতে থাকা তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদারের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া। আগের দিন ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ রীতিমতো হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় এই সমন্বয়কদের। পরিবার-পরিজন আর এমনকি, ডিবি এবং তৎকালীন প্রশাসনের কথা শুনে মনে হচ্ছিল, পুলিশি হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার কারণেই সমন্বয়কেরা বোধহয় কোনোমতে প্রাণ নিয়ে বেঁচেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ফেসবুক পেজে এ ঘটনা নিয়ে বলা হয়, ‘আমরা ১২ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডিবিপ্রধানের সাথে আজকে কোনো সামাজিক দেখা-সাক্ষাৎ করতে যাই নাই। গিয়েছিলাম একটি জরুরি এবং গুরুতর প্রয়োজনে। আমাদের সাথে সাক্ষাৎ না করাটা তাঁর দায়িত্বের গুরুতর অবহেলা বলে আমরা মনে করি। সেই সাথে তাঁর এই আচরণ অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক এবং অপমানজনকও মনে করি।’

এই ১২ জন শিক্ষক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গীতি আরা নাসরীন, সামিনা লুৎফা, মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, কাজলী সেহরীন ইসলাম, রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও সাঈদ ফেরদৌস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মো. সাইমুম রেজা তালুকদার, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের অলিউর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অরণি সেমন্তি খান ও কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার শিক্ষক তামান্না মাকসুদ।

২৭ তারিখ সন্ধ্যায় আরও দুই সমন্বয়ককে হেফাজতে নেয় ডিবি। তাঁরা হলেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। তাঁদেরকে তুলে নিয়ে আসার পেছনেও নিরাপত্তার কারণ দেখায় সংস্থাটি। সেই সঙ্গে চলমান ঘটনাবলি নিয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানানো হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বক্তব্য

সেদিন রাতে অনলাইনে সংবাদ সম্মেলন করে তিন দফা দাবি জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই দাবি পূরণে সরকারকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

তিন দফা দাবির মধ্যে অন্যতম ছিল, সমন্বয়কসহ আটককৃত আন্দোলনকারীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং ‘গণহত্যার’ সঙ্গে জড়িত মন্ত্রী পর্যায় থেকে কনস্টেবল পর্যন্ত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।

কোটা নিয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার বলেন, ‘আন্দোলনের মূল দাবি মেনে নেওয়া হয়েছে বলে প্রচার করছে সরকার। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল কমিশন গঠন করে এই সংকটের সমাধান করা। কিন্তু সেটি করা হয়নি বলেই আমরা এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, পুলিশের ধরপাকড়ের কারণে আন্দোলনকারীদের মধ্যে যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। তাই সমন্বিত কর্মসূচি ঘোষণা করা যাচ্ছে না।

আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিন দফা না মানা হলে আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেয়া হয় এই সংবাদ সম্মেলন থেকে।

দেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করার ষড়যন্ত্র: হাসিনা

এদিন আহতদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে গিয়ে যথারীতি আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়েন তিনি। সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশকে আবার ভিক্ষুকের দেশে পরিণত করতে এই ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করতেই এই ষড়যন্ত্র। দেশের মানুষকেই এই সহিংসতার বিচার করতে হবে। কোটা আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর জন্যই এত মানুষ হতাহত হলো। এইভাবে আর কেউ যেন কোনো ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে না পারে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

২৭ তারিখ রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে কারফিউয়ের সময় আরও শিথিল করার ঘোষণা দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি জানান, ২৮, ২৯ ও ৩০ তারিখ ঢাকা মহানগর ও ঢাকা জেলা, গাজীপুর মহানগর ও গাজীপুর জেলা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলায় সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে৷ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে থাকায় কারফিউ শিথিল করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

আপাতদৃষ্টিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তখন কিছুটা ভালো হচ্ছিল। কারফিউ শিথিলের সময় বাড়ছিল, রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল বাড়ছিল, এমনকি চিরচেনা যানজটও ফিরে এসেছিল। কিন্তু সেই সঙ্গে বাড়ছিল গ্রেপ্তার, বাড়ছিল লাশের সংখ্যা, হাসপাতালগুলোতে বাড়ছিল আহতদের আর্তনাদ।

ফলে বুঝতে অসুবিধা হয় না, আসাদুজ্জামান খানের ‘উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি’ আসলে ছিল ঝড়ের আগের গুমোট নীরবতা।

Ad 300x250

মসজিদ নিয়ে সংঘাতে মৃত্যু, এলাকায় ১৪৪ ধারা

ইসির গণমাধ্যমকর্মী নীতিমালা প্রত্যাখ্যান আরএফইডির, সংশোধনের আহ্বান

শাফিন আহমেদ যেভাবে মাইলসে যোগ দিয়েছিলেন

সংস্কার, গণহত্যার বিচার ও নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে: নাহিদ ইসলাম

‘যুদ্ধবিরতিতে সম্মত’—ট্রাম্প দাবি করলেও সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া

সম্পর্কিত