.png)

স্ট্রিম প্রতিবেদক


রাত ১০ টার মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার কথা থাকলেও ইতিমধ্যে সাড়ে ১২ টা পেরিয়ে গেছে। সিনেট ভবনে প্রার্থী, ভোটার, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য অংশীজনেরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
এর মধ্যেই মধ্যরাতে প্রথমে 'ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন' স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সিনেট ভবন। এর পরপরই সমবেত কন্ঠে ভেসে আসে দেশাত্মবোধক গান— 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি/সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি।'
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে মধ্যরাতে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। 'অতি জরুরি' উল্লেখ করে এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫-এর ভোট গণনা চলছে। আটটি কেন্দ্র থেকে প্রত্যেক হল সংসদের ফলাফল ও ডাকসুর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। সিনেট ভবন সামনে থেকে ডাকসুর অফিসিয়াল ফলাফল ঘোষণা করা হবে।


ডাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা থেকে ফলাফল ঘোষণা-উত্তর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রতিরোধ থেকে শুরু করে যেকোন ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাতে পুলিশের গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি গুজব প্রতিরোধে বিভিন্ন সংস্থার সাইবার টিম তৎপর রয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া শাখার উপ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান রাতে স্ট্রিমকে জানান, ভোট গণনা চলছে। আমাদের পুলিশও মোতায়েন রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাও আছে। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা মোতাবেক আমরা তাদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
তিনি বলেন, আগামীকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কর্তৃপক্ষ চাইলে আরও সময় বাড়ানো যাবে।

ডিবির সাইবার উত্তর বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ডাকসুর ভোট গ্রহণের শেষ পর্যায় থেকে গুজবের মাত্রা বাড়তে থাকে সাইবার স্পেসে। একারণে রাত থেকে সাইবার পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। গুজব ছড়ানোর কাজে সংশ্লিষ্টদের শনাক্তের কাজও চলছে।
গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একাধিক কর্মকর্তা জানান, ঢাবির পক্ষ থেকে যে সংখ্যক ফোর্স চাওয়া হয়েছে তার সবই মোতায়েন রয়েছে। পোশাকী পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলোতে ছদ্মবেশ গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুলিশের প্রস্তুতিও রয়েছে।
বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা স্পর্শকাতর পয়েন্টগুলো কঠোর নজরদারীর মধ্যে রেখেছেন। বিশেষ করে টিএসসি, সিনেট ভবন, ঢাবি ক্লাবসহ হল ভিত্তিক জোনগুলো কঠোর নজরদারীর আওতায় রাখা হয়েছে। নির্বাচনোত্তর ক্যাম্পাস পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ছাত্রসংগঠনগুলোর দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উধ্বর্তন কর্মকর্তারা।

ডাকসু নির্বাচনের প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনাকে ও পক্ষপাতকে ঘিরে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আনেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ সমর্থিত প্যানেল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের এজিএস পদপ্রার্থী আবদুল কাদের।
আজ রাতে ডাকসু ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। কাদের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরেরা জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
ডাকসু নির্বাচন ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে বলেও অভিযোগ করেন আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ইসলামী ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম ভোটকেন্দ্রের ভেতরে গিয়ে ‘মেকানিজম’ (কারসাজি) করেছেন আর ছাত্রদল বাইরে থেকে ‘মেকানিজম’ করছে।
আবদুল কাদের বলেন, ‘আমরা আগে থেকেই বলেছি, এই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ অথর্ব এবং নতজানু কমিশন। এরা দুই ভাগে বিভক্ত। একটি ভাগ ছাত্রদলের পক্ষ নিয়ে কাজ করেছে, অন্যটি শিবিরের। প্রচারণা থেকে মনোনয়নপত্র পর্যন্ত তারা অনেক বিধিনিষেধ দিলেও প্রার্থীরা নিয়ম ভঙ্গ করেছে, কিন্তু কমিশন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’
আবদুল কাদের বলেন, ‘আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন ক্ষমতার ভাগাভাগির রাজনীতিতে নিমজ্জিত। আমরা দেখেছি, ভিসি, প্রক্টর, সহকারী প্রক্টররা সবাই ভাগাভাগির মাধ্যমে পদ বণ্টন করেছেন। অনেকে জামায়াতপন্থী, অনেকে বিএনপিপন্থী। শিক্ষার্থীদের স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত হয়েছে।’
সব মিলিয়ে আজকের নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা আন্তরিকভাবে অংশ নিলেও প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতা ও দলীয় প্রভাবের কারণে এটি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন আবদুল কাদের। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা দাবি করছি এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
আগামীকাল বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম আজ মঙ্গলবর এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেল প্রতিরোধ পর্ষদ অভিযোগ করেছে, একটি পক্ষকে জিতিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পক্ষপাতমূলক আচরণ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ভোট গণনা কক্ষে ছাত্রশিবির মনোনীত সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েম এবং সদস্য প্রার্থী রায়হান উদ্দিনের প্রবেশের প্রসঙ্গ টেনে এ অভিযোগ করেন প্রতিরোধ পর্ষদের প্রার্থীরা।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনের সামনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে প্রতিরোধ পর্ষদ মনোনীত সহকারী সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী জাবির আহমেদ জুবেল বলেন, সাদিক কায়েম ও রায়হান উদ্দিনের ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশের জেরে ছাত্রদলও সেখানে ঢুকতে পেশিশক্তি প্রয়োগ করেছে। এটি হয়েছে প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক আচরণের জন্য। একটি পক্ষকে জিতিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে তারা।
তিনি বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসন অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতার দায় দেখতে পেলাম। ক্যাম্পাসে অনিরাপদ অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাইরে মারমুখী অবস্থানে রয়েছে দুটি রাজনৈতিক দল। কাঁটাবন-নীলক্ষেতে দেখতে পাবেন একদিকে জামায়াত, অন্যদিকে বিএনপি। বিশ্ববিদ্যালয় কাদের কারণে অস্থিতিশীল জায়গায় যাচ্ছে?
জুবেল বলেন, ভোট গণনায় কারচুপি মেনে নেওয়া হবে না। এখনো সুযোগ আছে প্রতারণা করবেন না। বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত করবেন না, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অবস্থানে নিন।
প্রতিরোধ পর্ষদের ভিপি পদপ্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, আমরা দেখলাম শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের জায়গাটি কঠিন করে দেওয়া হলো। প্রশাসন অব্যবস্থাপনা ও পক্ষপাতের চূড়ান্ত করেছে। নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, পদে পদে আইন লঙ্ঘন, যা সারা দেশে বাজে ইঙ্গিত দেয়।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে যুদ্ধাংদেহী অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। ভোট গণনায় কোন ধরনের কারচুপি মেনে নেওয়া হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে অব্যবস্থাপনাগুলো না হলে এই নির্বাচনের ব্যাপারে আরও বিশ্বাস-আস্থা থাকতে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষক দলের সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা। তবে নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বড় কোনো অসঙ্গতি শিক্ষক নেটওয়ার্ক দেখতে পায়নি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পর্যবেক্ষক দল এ মন্তব্য করেন।
সামিনা লুৎফা বলেন, 'পোলিং এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করেছি যে সব পাস, সকল পক্ষ, সকল প্যানেল এবং সকল প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট যথেষ্ট পরিমাণে নিয়োগ দেওয়া হয়নি এবং তাদের পাসগুলো তাদের কাছে পৌছানোর ক্ষেত্রে নানান রকম সময়ে তাদের কাছে পৌঁছেছে। অনেক সেন্টারে আমরা পোলিং এজেন্টদের খুঁজে পাইনি। মোট আবেদনের তুলনায় অনেক কম পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে বা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।'
সামিনা লুৎফা বলেন, 'দুইটি হলের কেন্দ্রে টিক দেয়া ব্যালট পাওয়া গেছে। যেটা নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা বলতে চাই যে আমাদের পর্যবেক্ষণে মনে হয়েছে, যে এই ভোটকেন্দ্রগুলোতে যাঁরা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের সকলকে সমভাবে, সমগুরুত্ব নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়নি।'
আটটি কেন্দ্রে সমভাবে সব নিয়ম মানা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোন নিয়মের কি অর্থ, সেটা একেক কেন্দ্রে একেকভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যদিও দেওয়া আছে যে প্রার্থী কেন্দ্রে ঢুকতে পারবে, কিন্তু অনেক কেন্দ্রেই প্রার্থীকে ঢুকতে দেওয়া হয় নাই।
ভোটারেরা অনেক ক্ষেত্রে দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকলেও কলম নিয়ে চলে গেছেন জানিয়ে সামিনা লুৎফা বলেন, 'ফলে কলমের সংকট দেখা দিয়েছে সেন্টারে। সেই সংকট মোকাবিলায় বলপয়েন্ট পেন দেওয়া হয়েছে। সেই পেন দিয়ে ভোট দেয়ার কারণে, যদি মেশিন তাকে রিড না করে, এই দায়টা কার?'
সামিনা লুৎফা বলেন, '৭৮ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী ভোট দিতে চলে এসেছেন, এতটা মনে হয় কেউ কল্পনা করেন নাই। এ কারণেই তাদের জন্য প্রস্তুতিমূলক যে জনবল, আমরা সেই জনবল দেখি নাই।'
সামিনা লুৎফা বলেন, 'প্রচুর গুজব আমরা শুনেছি। বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে স্ক্রিন বন্ধ হয়ে গেছে, কোথাও দেরিতে অন হয়েছে। এই সমস্ত বিষয় আমলে নিয়ে আমাদের মনে হয়েছে যে যে অব্যবস্থাপনাগুলো হয়েছে, সে অব্যবস্থাপনাগুলো যদি না হতো, তাহলে আমরা আরও ট্রাস্ট নিয়ে, আরও বিশ্বাস-আস্থা নিয়ে এই নির্বাচনটার বিষয়ে বলতে পারতাম।'
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আরও কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে আটটার দিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেলের কয়েজন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকরা দুটি কেন্দ্রে যান। পরে মিছিল করেন তাঁরা।
রাত পৌনে আটটার দিকে সিনেট ভবন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে যান ছাত্রদলের প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ও তাঁর সমর্থকরা। সেখানে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁদের বাগবিতণ্ডা হয়।
এ সময় আবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলামকে বলেন, 'আপনারা শেখ হাসিনাকে হার মানিয়েছেন। রোকেয়া হলের ঘটনায় আমরা চরম আশঙ্কায় আছি। আপনি সাদিক কায়েমকে ঢুকাবেন, আমাদের আর ঢুকাবেন না। রোকেয়া হলের ঘটনায় আমরা আশঙ্কা করছি আগে থেকে ব্যালট বাক্স ভরে রেখেছেন কিনা। আপনারা কেউ গঠনতন্ত্র সম্পর্কে নিশ্চিত বা অবগত নন।'
এরপর ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা ঢাকা ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে যান। সেখানে শামসুন্নাহার হলের ভোট গণনা চলছিল। তবে এক মিনিট মতো ভোট গণনার এলইডি স্ক্রিন বন্ধ ছিল। সেটি নিয়ে ক্ষোভ জানান ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা।

সেখানে ছাত্রদল নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করেন ও কেন্দ্রের বন্ধ দরজায় ধাক্কাধাক্কি দেন। তবে গেট না খোলায় সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তাঁরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্ত্বর পর্যন্ত মিছিল করেন তাঁরা।
মিছিলে ছাত্রদল কর্মীরা 'ভোট চোর ভোট চোর, প্রশাসন ভোট চোর', 'অবৈধ নির্বাচন মানি না মানব না', 'স্বৈরাচার আর রাজাকার মিলেমিশে একাকার' স্লোগান দেন।
এরপর আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে যান ছাত্রদলের প্রার্থী ও নেতা-কর্মীরা। সেখানে গিয়ে আবিদ অভিযোগ করেন, খালি বক্স ভর্তি করে নির্বাচনে কারচুপি করা হয়েছে।

ছাত্রদলের প্রতি বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে এনে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় না করানোর আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রশিবির সমর্থিত ডাকসুর জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ। আজ রাত সোয়া সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়।
এস এম ফরহাদ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীদের জড়ো করেছে ছাত্রদল। সেখানে তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। তাদের সেই দায় শিবিরের ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘২০২৪-এর আগস্টে ছাত্রলীগ বহিরাগতদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করেছিল। কিন্তু তারা টিকতে পারেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের এ ধরনের ঘটনা ঘটলে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করবে।
তিনি আরো বলেন, ‘অমর একুশে হলে ভোট কারচুপি হয়েছে। সেটার প্রমাণ আসার পর রোকেয়া হলে একটি নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছে।’
ফরহাদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে যারা বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কারো ওপর দায় চাপানো যাবে না।'

বিকেল ৪টায় ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহন শেষ হওয়ার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল বিকাল সাড়ে পাঁচটায় একটি জরুরী সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের পক্ষ থেকে কথা বলেন সহসভাপতি পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান।
সংবাদ সম্মেলনে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, সুষ্ঠু ভোটগ্রহন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। তাঁর অভিযোগ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচনে কারচুপি এবং আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছে।
আবিদুল বলেন, আজ টিএসসি, অমর একুশে, সিনেটসহ বিভিন্ন কেন্দ্রে ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল শিক্ষার্থীদের তাঁদের প্রার্থীদের নাম লেখা লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছেন। অথচ আমরা কেন্দ্রের ১০০ মিটার দূরে দাড়ালেও আমাদের জন্য বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে আমাদের নামে অপপ্রচার চালানো হয়েছে।'
'আমাদের সংগঠনের মনোনীত রোকেয়া হলের প্রার্থী সূচনা ভোটকেন্দ্রে বাইরে শিক্ষার্থীদের ব্যালট নম্বর বলছিলেন বলে তার ছাত্রত্ব বাতিলের হুমকি দিয়েছেন সহকারী প্রক্টর মনামী ম্যাম। একজন দায়িত্বশীল কর্তৃক এহেন আচরণ কোনোভাবে মেনে নেওয়া যায় না।” বলেন আবিদুল ইসলাম খান।
তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ৪১টি ব্যালটের নম্বর মনে রাখা সম্ভব না। ফলের তাঁর প্যানেলের প্রার্থীরা আচরণবিধির প্রতি সম্মান রেখেই ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে থেকে শিক্ষার্থীদের ভোট প্রদানের আহবান করেছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটগুলোতে যে কোনো সময় সংঘর্ষ হতে পারে। গেটগুলোতে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সিনেট ভবনে উপাচার্যের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রাকিব প্রশ্ন তুলে বলেন, প্রশাসন কি জামায়াতের কাছে নতজানু। দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নেই?
এসময় ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, আমরা সকাল থেকে খবর পাচ্ছিলাম জামায়াতের সন্ত্রাসীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি পয়েন্ট জড়ো হচ্ছে। ৮ ঘণ্টায় কোনো স্টেপ নিতে পারলেন না। এর প্রভাব নির্বাচনে পড়েছে। মানুষ মনে করছে, জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক রয়েছে। প্রক্টরের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের কথা শোনা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এমনও খবর পেয়েছি তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অবস্থান করেছে। তারা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিয়েছে।
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে ১৬টি অনিয়মের অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন নাছির।
এসময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা বলেন, গেটগুলোতে জামায়াত-শিবির আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। আপনি ব্যবস্থা নেবেন নাকি আমরা প্রতিহত করব।

ডাকসু নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষে চলছে গণনা। ভোট গণনার কক্ষে শিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম ও সদস্য প্রার্থী রায়হান উদ্দিনের প্রবেশ নিয়ে ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে অভিযোগ জানান প্রতিরোধ পর্ষদের এজিএস পদপ্রার্থী জাবির আহমেদ জুবেল।
জাবির ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ভোট গণনার সময় ভোট গণনার কক্ষে শিবির মনোনীত ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম এবং সদস্য প্রার্থী রায়হান উদ্দিন ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশ করেন। ডাকসুর কোনো প্রার্থীর ভোট গণনা কক্ষে প্রবেশের অনুমতি নাই। তবুও শিবিরের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম এবং সদস্য প্রার্থী রায়হান উদ্দিন কোন নিয়মের বলে ভোট গণনার কক্ষে প্রবেশ করেন তা একটা বড় প্রশ্ন।’
এর আগে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারি হামিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ভোটকেন্দ্রে এসে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অধ্যাপক রবিউল ইসলামকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ভোট গণনা কেন্দ্রে প্রার্থী ঢোকার নিয়ম আছে কিনা, সাদিক কায়েম কিভাবে ঢুকল।’
উত্তরে তিনি বলেন, ‘তখন আমি ছিলাম না, এটা দেখতে হবে।’ অন্য একটি দল এসে ঢুকতে চাইলেও তাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে জসিম উদ্দীন চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা স্ট্রিমকে জানান, এ বিষয়ে আমরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেখতে হবে। ভোট গণনার সময় প্রার্থী প্রবেশ করতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে কিছু বলা নেই।
ফলাফলের জন্য সিনেট ভবনের সামনে জড়ো হচ্ছেন প্রার্থী ও সমর্থকরা। বিকাল ৪টায় আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে ভোটগ্রহণ। যারা ৪টার আগে এসেছেন তাদের ভোট সংগ্রহের পর শুরু হয়েছে ভোট গণনা।
টিএসসি কেন্দ্রে ৫৮ শতাংশ, শারিরীক শিক্ষা কেন্দ্রে প্রায় ৭৮ শতাংশ, সিনেট ভবন কেন্দ্রে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত প্রায় ৮২ শতাংশ, ভোট পড়েছে বলে জানান দায়িত্বরত কর্মকর্তারা। উদইয়ন স্কুলে পড়েছে ৮৫ শতাংশ , ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৬৩ দশমিক২৫ শতাংশ, ৬৭ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে। ডাকসুতে এবারে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন।
দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শুরু হয়ে একটানা ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এখন ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষা।
এবারের ডাকসু নির্বাচনে ২৮টি পদের জন্য মোট ৪৭০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এছাড়াও, ১৮টি হলের প্রতি হল সংসদে ১৩টি করে মোট ২৩৪টি পদের বিপরীতে লড়েছেন ১ হাজার ১০৮ জন প্রার্থী।
ডাকসু ও হল সংসদ মিলে মোট ৪১টি পদের জন্য ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন নিবন্ধিত ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি কেন্দ্রে ৮১০টি বুথে এই ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।

উমামা ফাতেমার প্যানেল স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের পক্ষ থেকে শিবিরকে ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, শিবিরের প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্র প্রাঙ্গণে ঢুকতে দেওয়া হলেও বাকিদের দেওয়া হচ্ছে না।
এর প্রতিবাদে বিকেল পৌঁনে চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে প্যানেলটির বিভিন্ন পদপ্রার্থীরা। বিক্ষোভের সময় 'শিবিরের নির্বাচন মানি না, মানব না' স্লোগান দেওয়া হয়।

ডাকসুর ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বিশ্ব ইনসানিয়াত বিপ্লব স্টুডেন্ট ফ্রন্টের প্রার্থী তাহমিনা আক্তার ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। বিকেল পৌঁনে চারটার দিকে ঢাবির টিএসসির সামনে প্রেস ব্রিফিং করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি।
এ সময় তিনি বলেন, আগে থেকে শিবির প্রার্থীর পক্ষে পুরণ করা ব্যালট দিয়ে এবং বিভিন্ন কৌশলে জালিয়াতি করে শিবির প্রার্থীকে জিতিয়ে দেয়ার জন্য প্রহসণের ভোট গ্রহণ হচ্ছে। এ জন্য আমি ভিপি পদে প্রার্থীতা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে এই ভুয়া নির্বাচন বর্জন ও বয়কট করলাম। শিবিরের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট ভিসি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবার উপর অনাস্থা জ্ঞাপন করে তাদের পদত্যাগ দাবি করছি এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।

ছাত্র অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা অভিযোগ করেছেন, অন্য প্যানেলের প্রার্থীদের ভোটকেন্দ্রে ঢুকতে দেওয়া হলেও তাঁকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা এমন নির্বাচন প্রত্যাশা করিনি। আমাকে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে, ঢুকতে দেওয়া হয়নি। নিয়মে থাকলেও আমাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন ম্যানিপুলেটেড প্রভাবিতকরণের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচন আমরা প্রত্যাশা করি না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র সহ-সভাপতি প্রার্থী (ভিপি) উমামা ফাতেমা বলেছেন, ‘ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীদের লিস্ট ভোটারদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে একপাশে লেখা স্বতন্ত্র, আবার ওই পোস্টারের উল্টোপাশে শিবিরের প্রার্থীদের তালিকা।’
মঙ্গলবার ভোটকেন্দ্র পরির্দশনে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন কথা বলেন।
ভোট কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আরেকটু পর্যবেক্ষণের পর বলা যাবে।’
ফলাফলের ব্যাপারে ইতিবাচক জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, সবাই পজিটিভ। ছাত্রীরা অনেক ইতিবাচক দেখছি, ছাত্ররাও। ফেয়ার হলে নিরপেক্ষ প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসবে বলে আশা করি।’

ডাকসুর ভোটকেন্দ্র জগন্নাথ হলের মোট ভোটার ২ হাজার ২০০। এর মধ্যে বেলা সোয়া তিনটা পর্যন্ত এক হাজার ৮০৮ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন। শতকরা হিসেবে যা প্রায় ৮২ শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে প্রাধ্যক্ষ দেবাশীষ পাল সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, বিকেল চারটা ভোট প্রদানের শেষ সময়। অবশিষ্ট সময়ে আরও কিছু ভোটার ভোট দেবেন বলে আশা করা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে স্বতন্ত্র সহ-সভাপতিপ্রার্থী (ভিপি) শামীম হোসেন অভিযোগ করে বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়েছে।’ তবে এখন পর্যন্ত ভোট ‘মোটামুটি সুষ্ঠু’ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘কিছু ভুলত্রুটি হচ্ছে, তবে আমার দেখামতে ভোট এখন পর্যন্ত সুষ্ঠুই হচ্ছে।’
‘প্রোপাগান্ডা ছড়ানো’ হয়েছে অভিযোগ করে শামীম বলেন, ‘এটি করছে একটি বিদেশি গোষ্ঠী। আমি এটি নিয়ে সিরিয়াস নই। তাদের প্রোপাগান্ডা যদি জয়লাভ করে তাহলে আমি পরাজিত হবো।’
তবে জয়ের ব্যাপারে ‘শতভাগ আশাবাদ’ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাকআপ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ফলাফল যাই হোক মেনে নেব, ইনশাআল্লাহ।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় কার্জন হলের ভেতরে তরিকুল শিবলী (৪০) নামে এক সাংবাদিকের আকস্মিক মৃত্যু হয়েছে। তিনি চ্যানেল এস টেলিভিশনের সিটি রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে অচেতন অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সহকর্মীরা জানান, ডাকসু নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় কার্জন হলের ভেতরে তরিকুল শিবলী লাইভে ছিলেন। হঠাৎ করেই তিনি অচেতন হয়ে পড়ে যান। তাৎক্ষণিকভাবে তার সহকর্মীরা তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যান, যেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক এই মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে এবং বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবগত করা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকরা ধারণা করছেন, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তরিকুল শিবলীর মৃত্যু হয়েছে। তবে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ছোটখাট প্রবলেম হতেই পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।
আজ পৌঁনে দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় মাসুদ আলম আরও বলেন, ভোটের সময় হিউজ একটা ক্রাউড, হিউজ ভোটার। ছোটখাট প্রবলেম হতেই পারে। … আমরা এখানে আসছি নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে। তারা যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবে কাজ করবো।

আজ দুপুর পৌনে ২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) যান ছাত্রদলের প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম।
এসময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। টিএসসি থেকে বের হওয়ার সময় হামিমের সমর্থকরা স্লোগান দেন 'রাজাকারের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না।'
এসময় ভোটকেন্দ্রে ছাত্রদলের প্রার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন হামিম। তিনি বলেন, অন্য প্যানেলের প্রার্থীরা ভেতরে ঢোকার সুযোগ বেশি পাচ্ছে।

কার্জন হলের ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথে এভাবে ছাত্রদলের কর্মীরা দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা ভোট দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের বলছেন, ভোটাররা যেন ছাত্রদলের প্রার্থীকে ভোট দেয়। ভোট দিয়ে বের হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তাঁরা কাকে ভোট দিলেন। স্ট্রিম ছবি

ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস পদপ্রার্থী এস এম ফরহাদ ছাত্রদলের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সকাল থেকে এক নাটকের মঞ্চ দেখছি। বিএনপিপন্থী শিক্ষক আর কর্মচারীরা চমৎকার নাটক করছেন এবং প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে।
তিনি বলেন, ইউল্যাবের কেন্দ্রে সকাল থেকে সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সাড়ে ১০টায় আমি সেখানে যাই। অভিযোগ দিলে আধঘন্টা আমাদের দাঁড় করিয়ে রেখে ঢুকতে দেওয়া হয়। সেখান থেকে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের এক পোলিং এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়। সেখানে ১০জনের মত ছাত্রদলের পোলিং এজেন্ট ছিল। একুশে হলে জিয়াউর নামে এক কর্মকর্তা পূরণকৃত ব্যালট বাক্সে ভরে দিয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদেরও পূরণ করা ব্যালট দিয়েছেন।
ফরহাদ আরও বলেন, 'এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রেস কনফারেন্স দেখতে এসে আরেক বিএনপি কর্মকর্তা আমাদের নামে চেক বক্স বিলি করেছে। একুশে হলের ঘটনা লুকানোর জন্য সে এ ধরনের কর্মকান্ড ঘটিয়েছে।'
তিনি বলেন, আমি তাঁদের গ্রেপ্তারের দাবী জানাচ্ছি এবং এই মুহুর্তে তাদের বহিস্কার করতে হবে। তাঁরা কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে? ছাত্রদলের ভিপিপ্রার্থী সব কেন্দ্রে যাচ্ছেন, কেন্দ্রে ঢুকছেন। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সেটা ঢাকার জন্য তাদের কর্মকর্তা দিয়ে আরেক নাটক মঞ্চস্থ করছেন। এটা একট বিট্রায়াল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীরা এক ভালো সময় পেয়েছিল ডাকসুকে কেন্দ্র করে।

ডাকসুতে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান অভিযোগ করেছেন, রোকেয়া হলে এক শিক্ষার্থীর হাতে দেওয়া ব্যালটে ছাত্র সাদিক কায়েম এবং এস এম ফরহাদের নামের পাশে আগে থেকেই ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল। আজ দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সাংবাদিকদের তিনি এ অভিযোগ জানান।
আবিদুল ইসলাম বলেন, রোকেয়া হল থেকে গুরুতর অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে রোকেয়া হলে প্রবেশ করেছি এবং সেই ঘটনার সত্যতা আমি পেয়েছি। একজন শিক্ষার্থী, তাঁকে যখন ব্যালট দেওয়া হয়েছে, সে যখন ব্যালট নিয়ে গিয়েছে ভোট দিতে, বুথে গিয়ে দেখতে পেয়েছে, সাদিক কায়েম এবং ফরহাদের ব্যালটে আগে থেকে ক্রস চিহ্ন দেওয়া আছে।
তিনি বলেন, এটা নতুন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে অশনিসংকেত। আমি দ্রুত ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেছি। ম্যাডামদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরাও বলেছে, এটা কিভাবে হয়েছে তাঁরা জানেন না।

বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ সমর্থিত প্যানেল বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি পদপ্রার্থী আবদুল কাদের বলেন, 'তারা (ছাত্রদল) বলেছিলেন আমাদের সময় দেন গুছিয়ে নিই। আজকে বুঝতে পেরেছি তারা কি গুছিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন। নির্বাচন কমিশন একটা গোষ্ঠীর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে কোনো অভিযোগ নেওয়া হয়নি।’
ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাংবাদিকদের তিনি এ সব কথা বলেন। কাদের আরও বলেন, আমরা দেখেছি নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র সংগ্রহের সময় ছাত্রদলকে সুযোগ দেওয়ার জন্য একদিন সময় বাড়িয়ে দিয়েছিল। আচরণবিধি লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা চলছে। আজকে আমরা দেখছি কীভবে একটা বিশৃঙ্খল ডাকসু নির্বাচন হয়।'
উল্লেখ্য, মনোনয়নপত্র সংগ্রহের শেষ দিন ছিল ১৮ আগস্ট এবং জমা দেওয়ার তারিখ ছিল ১৯ আগস্ট। পরে সেটা বাড়িয়ে যথাক্রমে ১৯ আগস্ট ও ২০ আগস্ট করা হয়।
তিনি আরও বলেন, এত ধরনের ষড়যন্ত্রের পরেও শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেছে কিন্তু তাদের সঙ্গে তামাশা করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন একটা গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করছে। আমরা দেখেছি ছাত্রদলের আবিদ ভোটকেন্দ্রের বুথে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। আচরণবিধির কোনো বালাই নাই। এখন বুঝতেছি ছাত্রদল কেন বয়সসীমা উঠিয়ে দিতে চেয়েছিল। দেখছি কিভাবে এমফিলের ছাত্র হিসাবে ভর্তি হয়ে ভোট কারচুপি করা যায়। আজকে এই ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন নীরব ভূমিকা পালন করছে। এত বড় গণঅভ্যুত্থানের পর এমন ডাকসু কোনোভাবেই কাম্য নয়।'

ভূতত্ত্ব বিভাগ ভোটকেন্দ্রের সামনে থেকে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিমকে সরে যেতে বলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মারুফুল ইসলাম।
ভোটকেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তা হামিমকে বলেন, অসুবিধা নেই। এইটুকু মানলেই আমি খুশি।
এ সময় হামিম বলেন, আমরা তো মানতেই চাই।
এক ছাত্রকে দুইটি ব্যালট পেপার দেয়ার ঘটনায় একজন পোলিং অফিসারকে অব্যাহতি দিয়েছে ডাকসু নির্বাচন কমিশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন চলাকালে কার্জন হলের দ্বিতীয় তলায় অমর একুশে হলের ভোটকেন্দ্রে একজন শিক্ষার্থীকে অনিচ্ছাকৃতভাবে দুইটি ব্যালট পেপার দেয়া হয়।
আজ দুপুর ১২ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ পরিচালক ফররুখ মাহমুদের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অব্যাহতিপ্রাপ্ত পোলিং অফিসারের নাম জিয়াউর রহমান। তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিষয়টি যে অনিচ্ছাকৃত ভুল তা অভিযোগকারী ভোটারও বুঝতে পারেন। তারপরও ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসন বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ রাখতে বদ্ধপরিকর বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

ডাকসু নির্বাচনকে কলঙ্কিত করতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের এজেন্টদের বের করে দিচ্ছে নির্বাচনী কর্মকর্তারা বলে অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। আজ এই সংগঠন সমর্থিত সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. খায়রুল আহসান মারজানের বরাতে সংগঠনের প্রচার সম্পাদক মুঈনুল ইসলামের সই করা এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় তালিকা প্রদানের মাধ্যমে নির্বাচনী এজেন্ট নিশ্চিত ও তাদের ছবিযুক্ত এজেন্ট কার্ড কমিশন থেকে প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হলেও নির্দিষ্ট কিছু সংগঠন ব্যতীত ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর এজেন্টদের ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দিচ্ছেন ডাকসু নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা।
ইউল্যাব কেন্দ্রে সকাল আটটার পূর্বে ছাত্রদলের প্যানেল থেকে পাঁচজন এজেন্ট ঢোকার সুযোগ করে দিলেও ইশার প্যানেল থেকে বৈধ কার্ডধারী একজন এজেন্টকেও ঢুকতে দিচ্ছে না। বরং কার্ড থাকা সত্ত্বেও বের করে দিচ্ছে। মারজান বারবার জানতে চাইলেও নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কোন সদুত্তর দিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোন পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না বলে হুশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম নির্বাচন কমিশনে থাকা সাদা দলের ব্যক্তিবর্গ একটি নির্দিষ্ট সংগঠনের পক্ষে কাজ করার সংখ্যা রয়েছে।

ডাকসু নির্বাচনের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়ে প্রতিরোধ পর্ষদের জিএস পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘এখন পর্যন্ত যা দেখছি তা খুবই ইতিবাচক। যদি ভোটের এই পরিবেশ থাকে থাকে তাহলে চমৎকার একটা নির্বাচন আমরা পেতে যাচ্ছি। যারা এখনো ভোট দিতে আসেননি তারা প্লিজ আসুন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু অভিযোগ আছে। বড়দলগুলোর পক্ষপাতের কিছু অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তবে প্রচণ্ড স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমরা দেখতে পাচ্ছি।’
মেঘ আরো জানান , ‘আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। কিছু কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে ভোটাররা যদি ব্যাপক আকারে উপস্থিত হয় তাহলে কোনো ম্যানিপুলেশন বা ইঞ্জিনিয়ারিং দিয়ে কাজ হবে না।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা জোনের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম।
মঙ্গলবার বেলা পৌঁনে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা জানান।
মাসুদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে ভোট দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আশা করছি ভোটের পুরো প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে হবে। অনেক ভোটার, তাই বাইরে ভিড় হচ্ছে।

ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’-এর সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. আবু সাদিক (সাদিক কায়েম) নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছেন। তিনি বলেন, ‘১০০ গজের মধ্যে লিফলেট বিতরণে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও অনেক প্রার্থী এই নিয়ম লঙ্ঘন করছেন।’
মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে টিএসসি ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় সাদিক এই মন্তব্য করেন।
সাদিক আরও বলেন, এই নির্বাচনে যিনিই বিজয়ী হন না কেন, আমরা মনে করি এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় হবে। কারণ আমরা একটি গণতান্ত্রিক ও অংশগ্রহণমূলক ডাকসু নির্বাচন চেয়েছিলাম। সবাই মিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নতুনভাবে সাজানোর ব্যাপারে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রয়েছে। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কুশল বিনিময় করেন এবং ভোট প্রার্থনা করেন।

পুলিশ, বিজিবি, ডিবি, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিট,ডগ স্কোয়াড,সোয়াটের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দারাও কাজ করছেন। চেকপোস্ট গুলোতে বসানো হয়েছে সিসিটিভি মনিটরিং, মোবাইল টহল, রিজার্ভ ফোর্স। এ ছাড়াও সরেজমিনে কাজ করছেন শিক্ষকদের ভলান্টিয়ার টিম।

রিটার্নিং অফিসার বলেন, শামসুন্নাহার হলের মেয়েরা ২৬% ভোট দিয়েছে। সকাল ১০ টা বেজে ৫০ মিনিট পর্যন্ত মোট ভোটার সংখ্যা ছিল এক হাজার ৬৪। এতক্ষণে তা কিছুটা বেড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন্নাহার হলের ভোটকেন্দ্র ইউল্যাবে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এ তথ্য দেন রিটার্নিং অফিসার।

আজ সকাল আটটায় ভোটগ্রহণ শুরুর আগে টিএসসির ভোটকেন্দ্র, ভূতত্ত্ব বিভাগে এবং বিভিন্ন স্থানে ছাত্রদলের পূর্নাঙ্গ প্যানেলের পোস্টার বিলি করতে দেখা গেছে। টিএসসির ফটকে ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন প্যানেলের পোস্টার বিলি করেন।
বিষয়টি নিয়ে ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষার্থীদের ২০০ ইংরেজি ওয়ার্ড মুখস্থ করতে তাঁদের টাইম লাগে। সেই জায়গায় এখানে ১২৯৩ জন প্রার্থী। তাই চেনার সুবিধার্থে আমরা শিক্ষার্থীদের হাতে প্যানেলের প্রার্থীদের তালিকা তুলে দিচ্ছি। সব প্রার্থীই দিচ্ছে। এটা কোন অপরাধ নয়।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ভিপিপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘ সময় পরে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বোচ্চ সেক্রিফাইজ করে আজ আমরা এখানে। কারণ ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমরা কেউ কারও শত্রু নই। এ জন্য আমরা সকলে মিলে নির্বাচনটা উদযাপন করতে চাচ্ছি।
ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে তিনি এ সব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, তবে ২০১৯ সালে আমরা যে নির্বাচন করেছি সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এখানে কিছু ত্রুটি আছে। যেমন দেখেন আমি একজন প্রার্থী আমার গলায় কোন কার্ড নেই। এমন অনেক ভিপি. জিএস, এজিএস প্রার্থী আছে, সবার কার্ডের প্রয়োজন ছিল। এইটুকু ঘাটতি তো আছে। অভিযোগ করলে অনেক অভিযোগ করা যায়। আজ কোন অভিযোগ নয়, আজ এনজয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগ এনেছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের ভিপিপ্রার্থী উমামা ফাতেমা।
উমামা অভিযোগ করেন, কিছু প্রার্থী ভোটকেন্দ্রের ভেতরে বুথ পর্যন্ত চলে যাচ্ছেন, যা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আজ সকালে টিএসসি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনে এসে এমন অভিযোগ করেন উমামা।
লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীদের হাতে লিফলেট ও ভোটারস্লিপ দিতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের। এ বিষয়ে উমামা জানান, বেশিরভাগ শিক্ষার্থী আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছেন কাকে ভোট দেবেন। এটি বরং নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বেলা ১০ টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে গিয়ে বাধার মুখে পড়েন ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের জিএস প্রার্থী এম এম ফরহাদ। পরে সেখান থেকে ফিরে যান তিনি।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, প্রার্থী যে কেন্দ্রের ভোটার শুধু সেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে। অন্য কোন কেন্দ্রে প্রবেশের সুযোগ নেই।
এস এম ফরহাদ বলেন, যা নিয়ম তা মানতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিনা আলম জাফনা বলেন, ‘যাকে ভোট দিয়েছি তার সাথে অনেক কাজ করেছি। সে অনেক আন্দোলন সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত। ক্যাম্পাসে এমন একটা মুখ দরকার। আশা করি তিনি জিতবেন। হাইকোর্টের রিটের সময় ভাবছিলাম ডাকসু হবেনা। ফাইনালি হচ্ছে। ঈদের মতো লাগছে।’

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ভিড় বাড়ছে। মঙ্গলবার সকাল ৮টায় শুরু হওয়া এ ভোটের আগে থেকেই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিলেন ভোটাররা। এই ভিড় এখন আরও বেড়েছে।
বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল থেকে দলবেঁধে কেন্দ্রে আসছেন। বন্ধুদের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট কেন্দ্রে ঢুকছেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক দেব। জগন্নাথ হলের এই আবাসিক শিক্ষার্থী স্ট্রিমকে জানান, একসঙ্গে আট বন্ধু মিলে কেন্দ্রে এসেছেন তাঁরা।
সৌমিক বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন অনেকদিন ধরে হবে হবে বলে শুনে আসছিলাম। অবশেষে ভোট দিতে পারলাম, এবারই প্রথম। সবাই বিভিন্ন হল থেকে বাস থেকে একসঙ্গে আসছেন, দেখে খুব উচ্ছ্বসিত। প্রচারণার মধ্যেও এক্সাইটেড ছিলাম। যেন যোগ্য প্রার্থী জিতে আসে, এটাই এখন প্রত্যাশা। যে ক্যাম্পাসের জন্য কাজ করবে তাকে ভোট দিয়েছি।’

ভোটকেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী আবু বাকের মজুমদার স্ট্রিমকে বলেন, এখানে ভোটার সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছে। ভোটাররা আনন্দমুখরভাবে ভোট দিচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভোটে যোগ্য প্রতিনিধি পেতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি দেখা যায়নি। বিকাল পর্যন্তও সে সম্ভাবনা নেই।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষার্থীরা যাকেই প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচন করবে বাকিরা অবশ্যই তাকে সাপোর্ট দেবে। সেটাই স্বাভাবিক।

ডাকসু ভোট কেন্দ্রের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ সমর্থিত ‘ডাকসু ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের ভিপি পদপ্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইবোনেরা প্রত্যেকেই ভোট দিতে আসবেন। আজকের এই নির্বাচন, ভোটের অধিকার আমাদের লড়াই করে অর্জন করতে হয়েছে। দিস ইজ দ্য বিউটি অব ডেমোক্রেসি।
তাঁর অভিযোগ, টিএসসির গেটের ভেতর ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা। ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের বুথের আগ পর্যন্ত দেখার সুযোগ ছিল। জ্যামিং হচ্ছে কিনা বা কেউ কাউকে প্রভাবিত করছে কিনা তা এখনো বলতে পারছিনা। ভেতরে কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না।

ডাকসু নির্বাচনে পর্যাপ্ত সংখ্যক পোলিং এজেন্ট প্রবেশ করতে না দেওয়ার অভিযোগ করেছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। আজ সকালে কার্জন হল কেন্দ্রে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ অভিযোগ করেন।
রাকিব বলেন, ‘সব ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত পোলিং এজেন্ট ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের ভেতরে যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা জানিয়েছেন— পোলিং এজেন্ট কম থাকায় কেউ যদি দুটি ব্যালট পেপার পায়, সেটি যাচাই করা সম্ভব হবে না। অর্থাৎ মনিটরিং করার ব্যবস্থা যেহেতু কম, দুটো ব্যালট পেপার পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এটি বড় ধরনের আশঙ্কা। গতকালই এ নিয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ ছিল।
তিনি আরও বলেন, প্রতি কেন্দ্রে আটজন করে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী আমরা নামও জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু দেওয়া হয়েছে একজন করে। কেন্দ্রে ২০-৩০টি বুথের জন্য একজন এজেন্ট, একজনের পক্ষে দেখা সম্ভব না।
রাকিব বলেন, আমরা নিরপত্তা পাসও অনেক রাতে পেয়েছি। সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে যে ফলাফল হবে আমরা তা মেনে নেব।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আবিয়াজ ইরতেসাম স্ট্রিমকে বলেন, আজকে ভোট দিলাম। খুব ভালো লাগলো। আমি উদয়ন স্কুলে ভোট দিয়েছি, ওখানে গিয়ে দেখলাম খুব স্বতঃস্ফূর্ত একটি পরিবেশ। শান্তিপূর্ণভাবে নিজের ভোটটা দিতে পেরেছি।
তিনি বলেন, মোট ৪১ টা ভোট দিয়েছি। প্রথমদিকে একটু নার্ভাসনেস কাজ করেছে। কিন্তু যখন এক–দুইটা ভোট দেওয়া হয়ে গেছে, তখন আস্তে আস্তে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। আগেরদিন রাতে বন্ধুরা মিলে উৎসব করে সিলেক্ট করেছি। ভোট কাকে দেবো, কোন যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া যায়, সেটা নিয়ে বন্ধুদের সাথে আলোচনা করেছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০২১–২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী তাজরিন জাহান মুনিয়া স্ট্রিমকে বলেন, ভোট দিয়ে আমার অনেক ভালো লাগছে। এটা আমার জীবনে প্রথম ভোট। জাতীয় নির্বাচন এখনো দেওয়ার সুযোগ হয়নি। আমার কাছে মনে হয়, ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় ফসল ডাকসু নির্বাচন। বিভিন্ন কারণে ডাকসুু নির্বাচন হতে দেওয়া হয় না। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামের পরে এবার আমরা ডাকসু নির্বাচন দেখতে পাচ্ছি।
মুনিয়া বলেন, আমি ভোট দিয়েছি। ভেতরের পরিবেশ অনেক ভালো ছিল। সবাই অনেক সাপোর্টিভ ছিল। ম্যাডাম, বিএনসিসি থেকে শুরু করে যারা দায়িত্বে আছেন, তাঁর সুন্দর করেই দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিভাবে ভোট দিতে হবে। সবার পরিচয়পত্র যাচাই করা হচ্ছে। আমার তো ব্লাড গ্রুপও জিজ্ঞেস করেছে।
তিনি আরও বলেন, যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে আমাদের প্রত্যাশা তারা আমার ভয়েস হিসেবে কথা বলবে।

ডাকসু নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের ‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ’ সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী আবু বাকের মজুমদার।
তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনও ধরনের শঙ্কা দেখছি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক সচেতন। আশা করি, তারা যোগ্য প্রার্থী বেছে নেবেন। এ সময় তিনি ভোটারদের কাছে নিজের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন।

ব্যাগ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। টিএসসি কেন্দ্রের বাইরে একজায়গায় ব্যাগ জড়ো করছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রায় ছয় বছর পর আবারও অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ চলবে বিকাল চারটা পর্যন্ত। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বিকাল ৪টার মধ্যে কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়ানো শিক্ষার্থীরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোট শুরুর আগেই সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছেন ভোটাররা। আটটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে একে একে ভোট দিতে ওই কেন্দ্রে প্রবেশ শুরু করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়াম কেন্দ্রে তিনটি হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দিচ্ছেন। সকাল ৮টার পরপর ওই কেন্দ্রে গিয়েও ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়।
ডাকসুর কমনরুম রিডিং রুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের হয়ে লড়ছেন নূজিয়া হাসিন। জিমনেসিয়াম কেন্দ্রের সামনে থেকে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘ভোট মাত্রই শুরু হলো। পোলিং এজেন্টদের নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। আমার একজন পোলিং এজেন্ট দেখি এখানে আরেকজনের পোলিং এজেন্ট হয়ে কাজ করছে। উদয়নে আমাদের এক পোলিং এজেন্টের নাম আর ছবিতে মিল না থাকায় তাঁকে কার্ড দেওয়া হয়নি।’ তবে ভালোভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হবে বলে প্রত্যাশা তাঁর।

এবার ডাকসুতে ২৮টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৭১ জন। আর ১৮টি হল সংসদে নির্বাচন হচ্ছে ১৩টি করে পদে। হল সংসদের ২৩৪টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে এবার ভোটারদের ৪১টি ভোট দিতে হবে। সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন ৪৫ জন এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে আছেন ১৯ জন প্রার্থী। মধ্যে নারী শিক্ষার্থী ১৮ হাজার ৯৫৯ জন আর ১৮টি হল সংসদে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন ১ হাজার ৩৫ জন। প্রতিটি হল সংসদে ১৩টি করে মোট পদের সংখ্যা ২৩৪।
এবারই প্রথম আবাসিক হলের বাইরে ডাকসু ও হল সংসদের ভোট গ্রহণ হচ্ছে। ক্যাম্পাসের নির্ধারিত আটটি কেন্দ্রে (৮১০টি বুথ) শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২০ হাজার ৯১৫, ছাত্রী ১৮ হাজার ৯৫৯ জন।
কার্জন হল কেন্দ্রে ভোট দেবেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা (৫ হাজার ৭৭ ভোট)। শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রটি নির্ধারণ করা হয়েছে জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের শিক্ষার্থীদের জন্য (৪ হাজার ৮৫৩ ভোট)। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ভোট দেবেন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা (৫ হাজার ৬৬৫ ভোট)।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে ভোট দেবেন বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের শিক্ষার্থীরা (৪ হাজার ৭৫৫ ভোট)। স্যার এ এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন সিনেট ভবন কেন্দ্রে (৪ হাজার ৮৩০ ভোট)।
সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভোট দেবেন উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে। এই কেন্দ্রে মাস্টারদা সূর্য সেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীমউদ্দীন হলের মোট ৬ হাজার ১৫৫ শিক্ষার্থী ভোট দেবেন। ভূতত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্রে ভোট দেবেন কবি সুফিয়া কামাল হলের ৪ হাজার ৪৪৩ জন ছাত্রী। আর ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে শামসুন নাহার হলের ৪ হাজার ৯৬ জন ছাত্রীর ভোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।