পরীক্ষার হল থেকে অফিসের মিটিং, কাজের জিনিস মনে পড়ে না কিন্তু মাথায় মাছির মতো ভনভন করে বাজে কিছু ভাইরাল গান। চান বা না চান, বাসের স্পিকার থেকে চায়ের টং-এ বসা মুরুব্বির নোকিয়া ১২০০ সেট মারফত এইসব গান আপনার কানে ঢুকে পড়ছে হরদম। গত এক দশকে এই কালেকটিভ নেশা জাগানিয়া ৭টা ভাইরাল গান কোনগুলা ছিল? কেন-ই বা তারা ছোঁয়াচে?
তাহমীদ চৌধুরী
গত এক দশকে আমরা ইউটিউবে, স্পটিফাইয়ে এবং এর বাইরে অন্যান্য মাধ্যমে যে গানগুলো শুনেছি, সেসবের মধ্যে কিছু গান এমন, যেগুলো ভুলে যেতে চাইলেও আমরা ঐ অর্থে ভুলে যেতে পারি না। ব্যাপারটা এমন নয় যে কসরত করে গানগুলো মনে রাখতে হয়, প্রায় সময়ই এসব গানের কোরাস লাইন আমাদের মুখস্থ হয়ে যায়। যখন-তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যেখানে-সেখানে শুনতে শুনতেই। অর্থাৎ আমরা কথা বলছি ‘ভাইরাল গান’ নিয়ে। অবশ্য ভাইরাল গানকে কেউ কেউ ‘সংস্কৃতির অবক্ষয়’ বলে থাকেন, কিন্তু আদতে এগুলো তো একধরনের সামাজিক নথি। আমাদের নিজেদের সময়, অভ্যাস আর কল্পনার নথি। গত এক দশকের এমন অনেকগুলো বাংলা গান যেগুলো ‘ভাইরাল’ হয়ে আমাদের কান–মন–মিম দখল করেছে, সেসবের মধ্য থেকে সাতটি গান নিয়ে অল্প-স্বল্প আলাপ থাকলো এই লেখায়।
১. জাতীয় ‘ছ্যাঁকা’ সঙ্গীত | অপরাধী | আরমান আলিফ
২০১৮ সালে আসে আরমান আলিফের গান ‘অপরাধী’। নেত্রকোনার তরুণ শিল্পী আরমান আলিফ তার ভাঙা প্রেমের (?) করুণ আর্তি নিয়ে এই গানটি লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন। গানটির সরল কথা আর আকুতিভরা সুর দিনে দিনে পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী বহু মানুষের মনে ধরে যায়। সে সময় ইউটিউবের গ্লোবাল চার্টে জায়গা করে নেওয়া প্রথম বাংলা গান হয়ে দাঁড়ায় ‘অপরাধী’। আরমান আলিফ এরপর ‘নেশা’, ‘বেঈমান’-এর মতো আরও বেশকিছু গান গাইলেও, ‘অপরাধী’ তাঁর ‘ম্যাগনাম ওপাস’ হয়েই রয়ে যায়। ‘মাইয়া ও মাইয়া রে তুই অপরাধী রে’ লাইনটি দিয়ে যে পরিমাণ মিম, প্যারোডি আর টিকটক ভিডিও হয়েছে, তা বোধহয় বাংলাদেশের জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। নানা বয়সী মানুষ তো বটেই এমনকি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরাও ড্রেসিংরুমে বসে কাভার করেছিলেন এই গান। নারীরা অনেকেই ‘অপরাধী’ গানটি গাওয়ার সময় ‘মাইয়া’ শব্দের জায়গায় ‘পোলা’ শব্দটি ব্যবহার করতেন। এভাবেই ‘অপরাধী’ একটি সার্বজনীন ‘ছ্যাঁকা’ সঙ্গীতে পরিণত হয়।
২. ট্রান্সপারেন্ট প্রেম পরিকল্পনা | বরিশালের লঞ্চে উইঠা | নার্গিস
নার্গিসের এই গানটি তাঁর বেশিরভাগ গানের মতোই ঢাকা শহুরে ‘সুশীল’ সাংস্কৃতিক সড়কে অপরিশোধিত কাঁচা মাটির মতো। খুব স্পষ্ট আঞ্চলিক শব্দচয়নের কারণে বেশ পুরোনো সিডি-ক্যাসেটের সময়ের নার্গিসের গানগুলো দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বর্তমান তরুণদের কাছে। যাহোক, বরিশালের লঞ্চে গানটিতে শিল্পী বলছেন, বরিশালের লঞ্চে উইঠা/লইবো কেবিন রুম/বন্ধুরে মোর বুকে/লইয়া দিবো একটা ঘুম/ঠাইসা দিবো একটা ঘুম। বোঝা যাচ্ছে, শিল্পী প্রেমিকের সাথে সময় কাটানোর পরিকল্পনার কথা গানে গানে বলছেন। কিন্তু মোরাল পুলিশিং যেহেতু বহুদিন ধরেই বাংলাদেশে আছে, তাই দুজনকে যদি হঠাৎ জিজ্ঞেস করা হয় আপনারা কারা? এমন আশঙ্কার বিপরীতে শিল্পী বলছেন, আমার হাতে মোবাইল ফোন/বন্ধুর হাতে ক্যামেরা/জিজ্ঞাস করলে উত্তর দিব/সাংবাদিক আমরা। এই গানটি ছাড়াও–আর যাবো না বেগুন তুলিতে, পানি থাকে না, ছক্কা মাইরা দিসে এমন অসংখ্য গান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে বন্ধুদের আড্ডা থেকে টিকটক ইউজারদের মিলনমেলা অনুষ্ঠান, সর্বত্রই সজোরে বাজতে থাকে নিয়মিত।
৩. টুনির নামে যত নালিশ| ও টুনির মা | প্রমিত কুমার
২০০৯ সালে মুক্তি পেলেও, প্রমিত কুমারের ‘ও টুনির মা’ গানটি এখনো প্রত্যেক পিকনিক/পার্টিতে নিমন্ত্রণ ছাড়াই হাজির হওয়া সেই মেহমান, যাকে ছাড়া পিকনিক/পার্টি জমে না। নরসিংদীর পণ্ডিতপাড়া গ্রামে বসে লেখা এই গানটি শুরুতে ঢাকার কোনো রেকর্ডিং স্টুডিও গ্রহণ করতে চায়নি। অথচ মুক্তির পর থেকে আজ অব্দি দুই বাংলার বিয়ে-পুজা-পার্বণে গানটি অবিরত বাজছে। প্রমিত এরপর ‘টুনি সিনেমার নায়িকা হয়েছে’, ‘টুনি এখনো কথা শোনে না’-র মতো সিক্যুয়েল বের করে একটি ‘টুনি সিরিজ’ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। এসবের বাইরে সম্ভবত এটিই একমাত্র বাংলা গান যে গানের সর্বোচ্চ ডিজে রিমিক্স তৈরী হয়েছে।
৪. ক্যাসেট যুগের শেষ দীর্ঘশ্বাস | ও বন্ধু লাল গোলাপী | শরীফ উদ্দিন
সালটা ২০০৬। ক্যাসেটের ফিতা তখনও পুরোপুরি ছিঁড়ে যায়নি। সেই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্পী শরীফ উদ্দিনের ‘ও বন্ধু লাল গোলাপী’ অ্যালবামটি বাংলাদেশে একপ্রকার ঝড় তুলেছিল। অ্যালবামের টাইটেল সং ‘ও বন্ধু লাল গোলাপী’র সহজ অভিব্যক্তি আর বাদ্যের তড়িৎ তাল মানুষের মনে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, এক দশকেরও বেশি সময় পর আজও গানটি সমান জনপ্রিয়। শুধু লাল গোলাপী নয় ‘বোরকা পরা মেয়ে’,‘একটু দাঁড়াও মায়রে দেখি’, ‘ল্যাংটা সুলেমান’সহ তাঁর গাওয়া অনেক গান এখনও জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত, ল্যাংটা সুলেমান গানটি দিয়ে পিনাকী ভট্টাচার্যকে ঘিরে সম্প্রতি মিম তৈরীর হিড়িক পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। বহুদিন বাজারে কোনো নতুন গান নেই শরীফ উদ্দিনের। কিশোর বয়সে মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসি) পাশ করে গানে মনোযোগী হন শরীফ। গানের শিল্পী না হলে মাওলানা হতেন বলেও জানিয়েছিলেন গণমাধ্যমে। কণ্ঠ দিয়েছেন চলচ্চিত্রের গানেও। শাকিব খান অভিনীত ‘তোমাকে বউ বানাবো’ সিনেমার একটি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। সর্বশেষ শরীফের ‘বড় মায়া লাগাইছে’ গানটি প্রকাশিত হয়। এরপর আর কোনো নতুন গান আসেনি তার।
৫. নয়া সময়ের বাংলা লোকগান | বেশি ফাল পারিস না | খাইরুল বাশার
চাঁদপুরের খাইরুল বাশার। বছর কয়েক আগেও পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। এখন পুরোদস্তুর সংগীত শিল্পী। নিজে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করেন খাইরুল বাশার। লিখেছেন ৪০০-এর বেশি গান। ২০২২ সালের ৭ আগস্ট ‘বেশি ফাল পারিস না-পালাবার জায়গা পাবিনা’ শিরোনামের গানটি নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করলে তা রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। এই গানই তাকে দেশব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের আমলে অনেকেই ব্যঙ্গ করে সামাজিক মাধ্যমে এই গানের লাইনগুলো ব্যবহার করতেন প্রতিবাদ হিসেবে। বর্তমানে তাঁর কয়েকটি ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল আছে। এই গানটি ছাড়াও ‘চাইয়া থাকছ কেন, কি কবি ক’, ‘আমারে ডিস্ট্রাব করিস না’, ‘দেইক্কা লাইছি কইয়া দিমু’র মত অনেক গানের স্রষ্টা খাইরুল বাশার। তাঁর গাওয়া গানগুলো বাস্তবমুখী লোকগান হওয়ায় দিনদিন আরও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সব বয়সী শ্রোতার কাছে।
৬. সুপরিকল্পিত ভাইরাল পণ্য | দুষ্টু কোকিল | কনা, আকাশ
শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমার এই গানটি সযত্নে বানানো একটি ভাইরাল পণ্য। কণা ও আকাশ সেনের আকর্ষণীয় গায়কী, জমকালো ভিডিও এবং শাকিব খানের নাচ—সব মিলিয়ে এটি একটি নিখুঁত কমার্শিয়াল আইটেম সং। গানটি মুক্তির পরপরই কোটি কোটি ভিউ পায়। সম্প্রতি শাকিব খান অভিনীত ‘তান্ডব’ সিনেমার ‘লিচুর বাগানে’ শিরোনামের আরও একটি গান ভাইরাল হয়েছে। দুটি সিনেমারই পরিচালক রায়হান রাফী। লিচুরও বাগানে গানটি নেত্রকোনা অঞ্চলের প্রচলিত লোকগান। নেত্রকোণার ছত্তার পাগলা গানটি গেয়ে জনপ্রিয় করেন। ‘দুষ্টু কোকিল ডাকে রে কুঃ-কুঃ’ লাইনটি আর গানের হুক স্টেপ অনুকরণ করে তৈরি হয়েছে লক্ষ লক্ষ রিলস। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, সবাই এই দুষ্টু কোকিলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
৭. রাতের ভোটে আওয়ামী প্রোপাগান্ডা | জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা | সরোয়ার ও জিএম আশরাফ
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার গান হিসেবে প্রকাশিত হয় ‘জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা’ গানটি। বাংলাদেশে বর্তমানে গানটি রাজনৈতিক মিম এবং ট্রলের এক অফুরন্ত উৎস। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে তাঁর পতন উদযাপন করতে দেশের তরুণরা এই গান বাজিয়ে নাচানাচি করেছেন বিভিন্ন স্থানে। মূলত একরকম স্যাটায়ার করেই। সঙ্গীত আয়োজনের কল্যাণে বিষণ্ণ সন্ধ্যায় এই গান আপনাকে ‘চিল ভাইব’ দিতে পারে নিশ্চিতভাবেই। গানটির একটি লাইন এমন–ষোলো কোটি মানুষের একটাই ডিসিশন/জিতবে নৌকা নাই কোনো টেনশন। বলতেই হয়, গীতিকার মিশরীয় যাদুকরের মতো অন্তর্যামী এবং টাইম ট্র্যাভেলারের মতো শেখ হাসিনার একান্ত আকাঙ্খা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন গানটির লিরিকে। কেননা সে নির্বাচনে রাতের ভোটে কোনো টেনশন ছাড়াই জিতে যায় নৌকা এবং সেবার বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম মানুষ ভোটকেন্দ্রে গেলেও ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ভোট কাস্ট হয় সেই নির্বাচনে। এমনকি সরকারি ভোট গণনার হিসাব অনুযায়ী সে সময়, অনেকেই কবরস্থান থেকে ছুটি নিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন। কিন্তু পরিবারের কারও সঙ্গেই দেখা না করায় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো দীর্ঘদিন বিষণ্ণতায় ভুগেছিলেন।
গত এক দশকে আমরা ইউটিউবে, স্পটিফাইয়ে এবং এর বাইরে অন্যান্য মাধ্যমে যে গানগুলো শুনেছি, সেসবের মধ্যে কিছু গান এমন, যেগুলো ভুলে যেতে চাইলেও আমরা ঐ অর্থে ভুলে যেতে পারি না। ব্যাপারটা এমন নয় যে কসরত করে গানগুলো মনে রাখতে হয়, প্রায় সময়ই এসব গানের কোরাস লাইন আমাদের মুখস্থ হয়ে যায়। যখন-তখন ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় যেখানে-সেখানে শুনতে শুনতেই। অর্থাৎ আমরা কথা বলছি ‘ভাইরাল গান’ নিয়ে। অবশ্য ভাইরাল গানকে কেউ কেউ ‘সংস্কৃতির অবক্ষয়’ বলে থাকেন, কিন্তু আদতে এগুলো তো একধরনের সামাজিক নথি। আমাদের নিজেদের সময়, অভ্যাস আর কল্পনার নথি। গত এক দশকের এমন অনেকগুলো বাংলা গান যেগুলো ‘ভাইরাল’ হয়ে আমাদের কান–মন–মিম দখল করেছে, সেসবের মধ্য থেকে সাতটি গান নিয়ে অল্প-স্বল্প আলাপ থাকলো এই লেখায়।
১. জাতীয় ‘ছ্যাঁকা’ সঙ্গীত | অপরাধী | আরমান আলিফ
২০১৮ সালে আসে আরমান আলিফের গান ‘অপরাধী’। নেত্রকোনার তরুণ শিল্পী আরমান আলিফ তার ভাঙা প্রেমের (?) করুণ আর্তি নিয়ে এই গানটি লিখেছেন, সুর করেছেন এবং গেয়েছেন। গানটির সরল কথা আর আকুতিভরা সুর দিনে দিনে পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী বহু মানুষের মনে ধরে যায়। সে সময় ইউটিউবের গ্লোবাল চার্টে জায়গা করে নেওয়া প্রথম বাংলা গান হয়ে দাঁড়ায় ‘অপরাধী’। আরমান আলিফ এরপর ‘নেশা’, ‘বেঈমান’-এর মতো আরও বেশকিছু গান গাইলেও, ‘অপরাধী’ তাঁর ‘ম্যাগনাম ওপাস’ হয়েই রয়ে যায়। ‘মাইয়া ও মাইয়া রে তুই অপরাধী রে’ লাইনটি দিয়ে যে পরিমাণ মিম, প্যারোডি আর টিকটক ভিডিও হয়েছে, তা বোধহয় বাংলাদেশের জনসংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যাবে। নানা বয়সী মানুষ তো বটেই এমনকি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরাও ড্রেসিংরুমে বসে কাভার করেছিলেন এই গান। নারীরা অনেকেই ‘অপরাধী’ গানটি গাওয়ার সময় ‘মাইয়া’ শব্দের জায়গায় ‘পোলা’ শব্দটি ব্যবহার করতেন। এভাবেই ‘অপরাধী’ একটি সার্বজনীন ‘ছ্যাঁকা’ সঙ্গীতে পরিণত হয়।
২. ট্রান্সপারেন্ট প্রেম পরিকল্পনা | বরিশালের লঞ্চে উইঠা | নার্গিস
নার্গিসের এই গানটি তাঁর বেশিরভাগ গানের মতোই ঢাকা শহুরে ‘সুশীল’ সাংস্কৃতিক সড়কে অপরিশোধিত কাঁচা মাটির মতো। খুব স্পষ্ট আঞ্চলিক শব্দচয়নের কারণে বেশ পুরোনো সিডি-ক্যাসেটের সময়ের নার্গিসের গানগুলো দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বর্তমান তরুণদের কাছে। যাহোক, বরিশালের লঞ্চে গানটিতে শিল্পী বলছেন, বরিশালের লঞ্চে উইঠা/লইবো কেবিন রুম/বন্ধুরে মোর বুকে/লইয়া দিবো একটা ঘুম/ঠাইসা দিবো একটা ঘুম। বোঝা যাচ্ছে, শিল্পী প্রেমিকের সাথে সময় কাটানোর পরিকল্পনার কথা গানে গানে বলছেন। কিন্তু মোরাল পুলিশিং যেহেতু বহুদিন ধরেই বাংলাদেশে আছে, তাই দুজনকে যদি হঠাৎ জিজ্ঞেস করা হয় আপনারা কারা? এমন আশঙ্কার বিপরীতে শিল্পী বলছেন, আমার হাতে মোবাইল ফোন/বন্ধুর হাতে ক্যামেরা/জিজ্ঞাস করলে উত্তর দিব/সাংবাদিক আমরা। এই গানটি ছাড়াও–আর যাবো না বেগুন তুলিতে, পানি থাকে না, ছক্কা মাইরা দিসে এমন অসংখ্য গান বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে-ক্যাম্পাসে বন্ধুদের আড্ডা থেকে টিকটক ইউজারদের মিলনমেলা অনুষ্ঠান, সর্বত্রই সজোরে বাজতে থাকে নিয়মিত।
৩. টুনির নামে যত নালিশ| ও টুনির মা | প্রমিত কুমার
২০০৯ সালে মুক্তি পেলেও, প্রমিত কুমারের ‘ও টুনির মা’ গানটি এখনো প্রত্যেক পিকনিক/পার্টিতে নিমন্ত্রণ ছাড়াই হাজির হওয়া সেই মেহমান, যাকে ছাড়া পিকনিক/পার্টি জমে না। নরসিংদীর পণ্ডিতপাড়া গ্রামে বসে লেখা এই গানটি শুরুতে ঢাকার কোনো রেকর্ডিং স্টুডিও গ্রহণ করতে চায়নি। অথচ মুক্তির পর থেকে আজ অব্দি দুই বাংলার বিয়ে-পুজা-পার্বণে গানটি অবিরত বাজছে। প্রমিত এরপর ‘টুনি সিনেমার নায়িকা হয়েছে’, ‘টুনি এখনো কথা শোনে না’-র মতো সিক্যুয়েল বের করে একটি ‘টুনি সিরিজ’ তৈরি করার চেষ্টা করেছেন। এসবের বাইরে সম্ভবত এটিই একমাত্র বাংলা গান যে গানের সর্বোচ্চ ডিজে রিমিক্স তৈরী হয়েছে।
৪. ক্যাসেট যুগের শেষ দীর্ঘশ্বাস | ও বন্ধু লাল গোলাপী | শরীফ উদ্দিন
সালটা ২০০৬। ক্যাসেটের ফিতা তখনও পুরোপুরি ছিঁড়ে যায়নি। সেই সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্পী শরীফ উদ্দিনের ‘ও বন্ধু লাল গোলাপী’ অ্যালবামটি বাংলাদেশে একপ্রকার ঝড় তুলেছিল। অ্যালবামের টাইটেল সং ‘ও বন্ধু লাল গোলাপী’র সহজ অভিব্যক্তি আর বাদ্যের তড়িৎ তাল মানুষের মনে এমনভাবে গেঁথে যায় যে, এক দশকেরও বেশি সময় পর আজও গানটি সমান জনপ্রিয়। শুধু লাল গোলাপী নয় ‘বোরকা পরা মেয়ে’,‘একটু দাঁড়াও মায়রে দেখি’, ‘ল্যাংটা সুলেমান’সহ তাঁর গাওয়া অনেক গান এখনও জনপ্রিয়। প্রসঙ্গত, ল্যাংটা সুলেমান গানটি দিয়ে পিনাকী ভট্টাচার্যকে ঘিরে সম্প্রতি মিম তৈরীর হিড়িক পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। বহুদিন বাজারে কোনো নতুন গান নেই শরীফ উদ্দিনের। কিশোর বয়সে মাদ্রাসা থেকে দাখিল (এসএসসি) পাশ করে গানে মনোযোগী হন শরীফ। গানের শিল্পী না হলে মাওলানা হতেন বলেও জানিয়েছিলেন গণমাধ্যমে। কণ্ঠ দিয়েছেন চলচ্চিত্রের গানেও। শাকিব খান অভিনীত ‘তোমাকে বউ বানাবো’ সিনেমার একটি গানে কণ্ঠ দেন তিনি। সর্বশেষ শরীফের ‘বড় মায়া লাগাইছে’ গানটি প্রকাশিত হয়। এরপর আর কোনো নতুন গান আসেনি তার।
৫. নয়া সময়ের বাংলা লোকগান | বেশি ফাল পারিস না | খাইরুল বাশার
চাঁদপুরের খাইরুল বাশার। বছর কয়েক আগেও পেশায় ছিলেন কাঠমিস্ত্রি। এখন পুরোদস্তুর সংগীত শিল্পী। নিজে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করেন খাইরুল বাশার। লিখেছেন ৪০০-এর বেশি গান। ২০২২ সালের ৭ আগস্ট ‘বেশি ফাল পারিস না-পালাবার জায়গা পাবিনা’ শিরোনামের গানটি নিজের ফেসবুক পেইজ থেকে পোস্ট করলে তা রাতারাতি ভাইরাল হয়ে যায়। এই গানই তাকে দেশব্যাপী পরিচিতি এনে দেয়। শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের আমলে অনেকেই ব্যঙ্গ করে সামাজিক মাধ্যমে এই গানের লাইনগুলো ব্যবহার করতেন প্রতিবাদ হিসেবে। বর্তমানে তাঁর কয়েকটি ফেসবুক পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেল আছে। এই গানটি ছাড়াও ‘চাইয়া থাকছ কেন, কি কবি ক’, ‘আমারে ডিস্ট্রাব করিস না’, ‘দেইক্কা লাইছি কইয়া দিমু’র মত অনেক গানের স্রষ্টা খাইরুল বাশার। তাঁর গাওয়া গানগুলো বাস্তবমুখী লোকগান হওয়ায় দিনদিন আরও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে সব বয়সী শ্রোতার কাছে।
৬. সুপরিকল্পিত ভাইরাল পণ্য | দুষ্টু কোকিল | কনা, আকাশ
শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমার এই গানটি সযত্নে বানানো একটি ভাইরাল পণ্য। কণা ও আকাশ সেনের আকর্ষণীয় গায়কী, জমকালো ভিডিও এবং শাকিব খানের নাচ—সব মিলিয়ে এটি একটি নিখুঁত কমার্শিয়াল আইটেম সং। গানটি মুক্তির পরপরই কোটি কোটি ভিউ পায়। সম্প্রতি শাকিব খান অভিনীত ‘তান্ডব’ সিনেমার ‘লিচুর বাগানে’ শিরোনামের আরও একটি গান ভাইরাল হয়েছে। দুটি সিনেমারই পরিচালক রায়হান রাফী। লিচুরও বাগানে গানটি নেত্রকোনা অঞ্চলের প্রচলিত লোকগান। নেত্রকোণার ছত্তার পাগলা গানটি গেয়ে জনপ্রিয় করেন। ‘দুষ্টু কোকিল ডাকে রে কুঃ-কুঃ’ লাইনটি আর গানের হুক স্টেপ অনুকরণ করে তৈরি হয়েছে লক্ষ লক্ষ রিলস। সাধারণ মানুষ থেকে তারকা, সবাই এই দুষ্টু কোকিলের ডাকে সাড়া দিয়েছেন।
৭. রাতের ভোটে আওয়ামী প্রোপাগান্ডা | জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা | সরোয়ার ও জিএম আশরাফ
২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণার গান হিসেবে প্রকাশিত হয় ‘জয় বাংলা জিতবে আবার নৌকা’ গানটি। বাংলাদেশে বর্তমানে গানটি রাজনৈতিক মিম এবং ট্রলের এক অফুরন্ত উৎস। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে তাঁর পতন উদযাপন করতে দেশের তরুণরা এই গান বাজিয়ে নাচানাচি করেছেন বিভিন্ন স্থানে। মূলত একরকম স্যাটায়ার করেই। সঙ্গীত আয়োজনের কল্যাণে বিষণ্ণ সন্ধ্যায় এই গান আপনাকে ‘চিল ভাইব’ দিতে পারে নিশ্চিতভাবেই। গানটির একটি লাইন এমন–ষোলো কোটি মানুষের একটাই ডিসিশন/জিতবে নৌকা নাই কোনো টেনশন। বলতেই হয়, গীতিকার মিশরীয় যাদুকরের মতো অন্তর্যামী এবং টাইম ট্র্যাভেলারের মতো শেখ হাসিনার একান্ত আকাঙ্খা নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন গানটির লিরিকে। কেননা সে নির্বাচনে রাতের ভোটে কোনো টেনশন ছাড়াই জিতে যায় নৌকা এবং সেবার বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কম মানুষ ভোটকেন্দ্রে গেলেও ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি ভোট কাস্ট হয় সেই নির্বাচনে। এমনকি সরকারি ভোট গণনার হিসাব অনুযায়ী সে সময়, অনেকেই কবরস্থান থেকে ছুটি নিয়ে ভোট দিতে এসেছিলেন। কিন্তু পরিবারের কারও সঙ্গেই দেখা না করায় সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো দীর্ঘদিন বিষণ্ণতায় ভুগেছিলেন।
হ্যারি পটারের গল্পগুলো কোথায় ঘটে? অতীতে না ভবিষ্যতে? কিছুদিন আগেই একজন আমাকে বললেন, সপ্তম বইয়ের ক্লাইম্যাক্সেও হ্যারি মরে নি (এবং এই তথ্য নাকি খুব জরুরি!)। অথচ হ্যারি যে অসুস্থ ছিল এটাই তো আমি জানতাম না!
১ দিন আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পেছনে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল কি?
১ দিন আগে২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণ-অভ্যুত্থান সারা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। রাস্তায় নেমে আসে লাখো মানুষ। ছাত্র-জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় শেখ হাসিনা সরকার পতনের এক দফা দাবি। কিন্তু এই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের পেছনে কোনো সুসংগঠিত পরিকল্পনা ছিল কি?
২ দিন আগেমোদির সাথে রিলেট করব, কোনোদিন ভাবি নাই। একজন জেনজি হিসেবে মোদি ট্রাম্পের থেকে যে দাগা খাইল, তার জন্য গভীর সিম্প্যাথি বোধ করলাম। এই রকম সিচুয়েশনে বা ‘সিচুয়েশনশিপ’-এ বেঈমানির শিকার আমরা রেগুলার হই।
২ দিন আগে