leadT1ad

রাজনীতি নয়, ব্যক্তিগত বিরোধেই এই নৃশংসতা—ডিএমপি

লাল চাঁদ হত্যাকাণ্ড: পেছনে ছিল চোরাই তারের ব্যবসায় আধিপত্যের দ্বন্দ্ব, গ্রেপ্তার ৯

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তের প্রয়োজনে আটক ব্যক্তিদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

স্ট্রিম প্রতিবেদকঢাকা
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৫, ১৫: ৫৬
‘চোরাই তার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের দ্বন্দ্বেই মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী সোহাগ খুন হন’, সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) ৩ নম্বর গেটের সামনের জনাকীর্ণ সড়কে খুন হন ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯)।

আজ বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত নয়, বরং ব্যক্তিগত স্বার্থসংক্রান্ত দ্বন্দ্বের ফল। নিহত লাল চাঁদ ও অভিযুক্তরা একে অপরের পূর্বপরিচিত ছিলেন। দীর্ঘদিন ধরেই চোরাই তারের ব্যবসা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিরোধ চলছিল।’

ডিএমপি কমিশনার আরও জানান, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও মাঠপর্যায়ের গোয়েন্দা তদন্তের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত ঘটনায় জড়িত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দুজন সরাসরি সোহাগের ওপর ইট ও পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন। সর্বশেষ পটুয়াখালী থেকে রেজওয়ান নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘চাঁদাবাজদের জায়গা নাই’ স্লোগানের আড়ালে বর্বরতা

৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে জনসমক্ষে সোহাগকে ঘিরে ধরে একদল লোক। তারা তাঁকে নির্মমভাবে মারধর করে, ইট ও কংক্রিট বোল্ডার দিয়ে আঘাত করে মাথা ও শরীর থেঁতলে দেয়। একপর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করা হয় এবং কয়েকজন তাঁর শরীরের ওপর লাফিয়ে পা দিয়ে আঘাত করে। আশপাশে লোকজন দাঁড়িয়ে থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে পুলিশ ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায় এবং ‘চাঁদাবাজদের জায়গা নাই, ব্যবসায়ীদের ভয় নাই’ স্লোগান দিতে থাকা ‘মবের’ ভেতর থেকেই মহিন ও রবিন নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারত। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে জনরোষ বা গণপিটুনি হিসেবে চালানোর অপচেষ্টা ছিল। তবে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সেটিকে খুনের মামলায় রূপান্তর করি।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ ১৭ বছর ধরে পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তার সংগ্রহ ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সেই ব্যবসায় নতুন একটি পক্ষ জড়িয়ে পড়ে। এতে সোহাগ ও নতুন দলের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়, যার চূড়ান্ত পরিণতি হলো এই খুন।’

এস এন মো. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘এই দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। উভয় পক্ষই আগে থেকে পরস্পরকে চিনত। তবে আমাদের তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। অপরাধীরা চাইছিল ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ একচেটিয়াভাবে নিতে।’

হত্যার দিন ও মামলা প্রসঙ্গ

৯ জুলাই হত্যার ঘটনার পর ১০ জুলাই নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম বাদী হয়ে রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও কয়েকজন পলাতক রয়েছে, তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তদন্তের প্রয়োজনে আটক ব্যক্তিদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন করা হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা জানতে চান, গ্রেপ্তারকৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না। জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘দেশের যেকোনো নাগরিকের রাজনৈতিক পরিচয় থাকতেই পারে। কিন্তু এটি এই মামলার প্রাসঙ্গিক বিষয় নয়। আমাদের তদন্তে স্পষ্ট, এই হত্যাকাণ্ডের মূল পটভূমি ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।’

ডিএমপি সূত্র বলছে, তদন্ত কার্যক্রম দ্রুত গতিতে চলছে এবং গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিবরণসহ আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।

Ad 300x250

সম্পর্কিত