শিল্পকলা একাডেমির পরিচালনা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন লেখক-গবেষক আলতাফ পারভেজ। আজ সোমবার (২১ জুলাই) ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।

সৈয়দ জামিল আহমেদ দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের পরিচালনা পরিষদ বাতিল করে গত বছরের ১৭ অক্টোবর তা পুনর্গঠন করা হয়। পরিষদের সদস্য মনোনীত হন সাংবাদিক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, ছায়ানটের সঙ্গীত শিক্ষক লায়েকা বশীর, নৃত্যশিল্পী র‌্যাচেল অ্যাগনেস প্যারিস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা প্রমুখ।

আইন অনুযায়ী, শিল্পকলা একাডেমি পরিচালিত হয় একটি পরিষদের মাধ্যমে। পরিষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেন মহাপরিচালক। পরিচালনা পরিষদ থেকে তৈরি হয়ে আসা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাই নিয়ম। এ অর্থে পরিষদই একাডেমির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী সভা। প্রতি তিন মাসে একবার সভায় মিলিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে আইনে। কিন্তু গত ১০ মাসে মাত্র একবার পরিচালনা পরিষদের সভা হয়েছে। জানা গেছে, মহাপরিচালক না থাকায় শিল্পকলার করণীয় নির্ধারণ করে দিচ্ছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। কার্যত পরিষদকে করে রাখা হয়েছে নিষ্ক্রিয়।

আলতাফ পারভেজ স্ট্রিমকে জানান, গত বছরের অক্টোবরে পরিচালনা পরিষদ গঠনের পর একটিমাত্র সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সভারও তারিখ পরিবর্তন করায় তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। আরও তিন মাস আগেই পদত্যাগপত্রের খসড়া তৈরি করে রেখেছিলেন, এতদিন শিল্পকলা একাডেমিতে যাওয়া হয়নি বলে সেটি জমা দেওয়া হয়নি।

তিন বছরের জন্য সদস্য নির্বাচিত হয়ে বছর ঘোরার আগেই কেন পদত্যাগ করলেন জানতে চাইলে তিনি স্ট্রিমকে বলেন, ‘সৈয়দ জামিল আহমেদ সংস্কৃতি জগতের মানুষ ছিলেন। তিনি বুঝতেন, কী করতে হবে না হবে। আমি কিছু বললে তিনি বুঝবেন বা শুনবেন—এই সম্ভাবনা থেকেই পরিষদের সদস্য হতে রাজি হয়েছিলাম। সেই সম্ভাবনা না থাকাটা একটা ব্যাপার।’ পদত্যাগের দ্বিতীয় কারণ বলতে গিয়ে তিনি বলেন,‘আরেকটা ব্যাপারও আছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, এই পদে থেকে—এখনকার যে রাজনৈতিক এনভায়রনমেন্ট বা প্রশাসনিক এনভায়রনমেন্ট সেখানে—আমি কন্টিনিউ করতে পারব না।’

আলতাফ পারভেজের পদত্যাগের একটি কপি স্ট্রিমের হাতে এসেছে। পদত্যাগপত্রটিতে মহাপরিচালকের দপ্তরের স্বাক্ষর রয়েছে। খবরটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য শিল্পকলা একাডেমির সচিব ও দায়িত্বপ্রাপ্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ওয়ারেছ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আজ তিনি অফিসেই যাননি। পদত্যাগপত্র গ্রহণের ব্যাপারেও কিছু জানেন না। মঙ্গলবার অফিসে গিয়ে তিনি খোঁজ নেবেন। পরিষদের সদস্য পদত্যাগ করলে যা করণীয় আইন মেনে তিনি তা করবেন।

উল্লেখ্য, গত বছর ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ৯ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালক পদে শিল্পকলা একাডেমিতে যোগ দিয়েছিলেন নাট্যনির্দেশক ও গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। দুই বছরের জন্য দায়িত্ব নিয়ে মাত্র সাড়ে পাঁচ মাসের মাথায় হঠাৎ ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেন তিনি। এরপর আরও প্রায় পাঁচ মাস পেরিয়ে যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ পদে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন একাডেমির সচিব ওয়ারেছ হোসেন।