জুলাই সনদ যেভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালনে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। আজ শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহবাগে ‘নারীর ওপর ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অসম্মান প্রতিরোধে প্রস্তুত সচেতন নারী সমাজ’ শীর্ষক এক সমাবেশ ও মৌন মিছিলে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ জুলাই সনদ প্রসঙ্গে বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে রচিত হয়েছে, প্রণীত হয়েছে, স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেই জাতীয় সনদ আমরা অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। এর বাইরে চাপিয়ে দেওয়া জবরদস্তিমূলক আর যেকোনো প্রস্তাব যদি দেওয়া হয়, সেটা জনগণ বিবেচনা করবে।’
একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের মাধ্যমে জনগণের সম্মতি গ্রহণের জন্য যে প্রস্তাব করা হয়েছে সেটাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কারণ এটা ব্যয় ও সময় সাশ্রয়ী।’ তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘গণভোটের মধ্য দিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়ে যাবে না। গণভোটের মধ্য দিয়ে সংবিধান সংশোধন হয়ে যাবে না। তার জন্য অবশ্যই জাতীয় সংসদ গঠিত হতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও যোগ করেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান হোক, সেটা এই জাতি চায়।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘কোনো আরোপিত আইন দিয়ে, আদেশ দিয়ে, জবরদস্তিমূলক প্রস্তাব দিয়ে জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বে আমরা হস্তক্ষেপ করাতে দিতে চাই না। বাংলাদেশের একমাত্র হাউস বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ সার্বভৌম হাউস। যে হাউসের যেকোনো কার্যক্রম আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না। সেই জাতীয় সংসদের সার্বভৌমত্বকে ডিকটেট করার মতো কোনো প্রস্তাব, কোনো আরোপিত বিষয় থাকতে পারে না।’
জামায়াতে ইসলামীকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘একটি দল যারা ধর্মের নামে ব্যবসা করে, রাজনীতির ব্যবসা করে এবং জান্নাতের টিকেট বিক্রি করে রাজনীতি করতে চায়, তাদের হাতে আজকে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘তারা চায় যেন এই দেশের নারীরা বন্দি থাকে, যেন বাংলাদেশের অর্ধেক জনসমষ্টি অন্ধকারে থাকে এবং নারীর অগ্রগতি না হয়।’
নারীদের কর্মঘণ্টা কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাবের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কর্মঘণ্টা কমিয়ে দিলে নারীদের কর্মসংস্থান কমে যাবে। যারা কর্মসংস্থান, অফিস, আদালত, কল-কারখানা পরিচালনা করেন তারা স্বাভাবিকভাবেই নারীদের চাকরি দিতে চাইবেন না। যারা এই বক্তব্য দিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্য খারাপ। তারা চায় নারীরা অন্দরমহলে বন্দি থাকুক।’
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরী, মায়ের ডাক এর সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি প্রমুখ। সমাবেশ শেষে অংশগ্রহণকারীরা নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে একটি মৌন মিছিল নিয়ে শাহবাগ থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে।