গাজীপুরের চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের চক্রবর্তী এলাকায় একটি দাঁড়িয়ে থাকা বাসে আগুন দিয়েছে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাত ১০টার দিকে বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর কয়েকঘণ্টা পরেই আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৪টার দিকে নগরের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকাতেও একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া ভোরের দিকে সাভারের আশুলিয়াতেও সড়কের পাশে পার্কিং করা একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
গাজীপুর এলাকায় দুই বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাস দুটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে আশুলিয়ায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
চন্দ্রা-নবীনগর সড়কের পাশে থেমে থাকা বাসে আগুন
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুরের চক্রবর্তী এলাকার জ্যোতি ফিলিং স্টেশনের সামনে রাস্তার পাশে একটি বাস দাঁড়িয়ে ছিল। সেই সময় একজন মিস্ত্রি বাসের নিচে শুয়ে মেরামতের কাজ করছিলেন। হঠাৎ একটি মোটরসাইকেলে দুজন যুবক এসে বাসটির পাশে থামে। কিছুক্ষণ পর তারা পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দ্রুত মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায়।
বাসটির আসন ও কিছু যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছেপরে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। বাসে যাত্রী না থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাসটিতে আসন ও কিছু যন্ত্রাংশ পুড়ে গেছে। খবর পেয়ে কাশিমপুর থানা–পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, কয়েকজন দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেল নিয়ে এসে বাসটিতে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে। এতে বাসের ক্ষয়ক্ষতি হলেও হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এবিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
পেয়ারাবাগান এলাকায় ‘ভিআইপি’ বাসে আগুন
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকায় ভিআইপি পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস দাঁড়িয়ে ছিল। আজ ভোর সাড়ে ৪টার দিকে কয়েকজন বাসটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়ে যান। এ সময় আশপাশের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।
থেমে থাকা ভিআইপি পরিবহনের বাসে আগুন। সংগৃহীত ছবিপরে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তবে তাঁরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা না করে পুলিশের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। পুলিশ সদস্যরা সেখানে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেন। ওই সময় বাসের ভেতরে কেউ না থাকায় হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে বাসটি পুরোপুরি পুড়ে গেছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক মো. মামুন বলেন, রাতে মহাসড়কের পাশে একটি যাত্রীবাহী বাস দাঁড় করিয়ে রাখা ছিল। ওই বাসে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও বাসটি পুড়ে গেছে।
আশুলিয়ায় আলিফ পরিবহনের বাসে আগুন
ভোরের দিকে ঢাকার সাভারের আশুলিয়াতেও সড়কের পাশে পার্কিং করা আলিফ পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বাসের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা চালক আহত হয়েছে বলে জানা যায়। বুধবার সকালে বাসে আগুনের তথ্য নিশ্চিত করেন ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রণব চৌধুরী।
ভোর পৌনে ৫টার দিকে আশুলিয়ার সরকার মার্কেট এলাকায় নারী ও শিশু হাসপাতালের সামনে বাসে আগুনের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা জানায়, ভোর পৌনে ৫টার দিকে একটি মোটরসাইকেলে করে দুর্বত্তরা এসে বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয়রা ফায়ার সার্ভিসে ফোন দিলে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্তলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। ততক্ষণে বাসের ভেতরের সব পুড়ে যায়।
আশুলিয়ায় ভোরের দিকে দুর্বৃত্তদের আগুনে ভস্মীভূত আলিফ পরিবহনের বাস। স্ট্রিম ফায়ার সার্ভিসের সৌজন্যেগাড়ির চালক সাত্তার বলেন, ‘আমি গাড়ির ভেতরে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বাসে আগুন দেখে আমি জানালা দিয়ে লাফ দিয়ে নেমে যাই। বাস থেকে নেমে দেখি চার জন লোক দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা হেলমেট পরা ছিল। তাদের দেখে যখন আমি চিল্লানি শুরু করে দিছি। তখন তারা ফাঁকা মাঠে গুলি ছুড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। বাস থেকে নামার সময় আমি আমার পায়ের হাঁটুতে আঘাত পেয়েছি।’
ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রণব বলেন, ‘খবর পেয়ে ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্তলে গিয়ে মাত্র ১০ মিনিটের মাথায় আগুন নিয়ন্ত্রণে নেয়। তবে আমরা হতাহতের কোনো খবর পাইনি।’
এ বিষয়ে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নানের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোনটি রিসিভ করেননি।